নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহনের প্রায় আট মাস পর নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জনতার মুখোমুখি হলেন গাজীপুরের সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরকে গ্রীনসিটি ও ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যাক্তসহ অজ¯্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে নির্বাচিত হয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। গত আট মাসে জনগণের প্রত্যাশা কতটা পুরন করতে পেরেছেন তার হিসেব নিকেশ করতেই জনগণের মুখোমুখি হন তিনি। এসময় তিনি ‘অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে জনগণের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ‘জনগণের মুখোমুখি’ হয়ে তিনি নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিয়েছেন। জনগণের মুখোমুখি এ অনুষ্ঠানে তিনি উন্নয়ন কাজের জন্য সময় চেয়ে আবারো মহানগরকে যানজট,দূষণ ও জলাবদ্ধতা মুক্ত করে গাজীপুরকে গ্রীনসিটি ও ক্লিন সিটি গড়ার ঘোষণা দেন।

মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকায় জি,কে, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশেন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রাহাতুল ইসলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং নগরীর বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানজট ও জলাবদ্ধতা। সিটিতে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টন ময়লা আবর্জনা জমা হয়। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের কাছে ২০০ বিঘা জমি চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ড্যাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার কারখানার বর্জ্যে যাতে জলাশয় ও নদী দূষণ না হয় তার জন্য কারখানায় ইটিপি স্থাপনে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ইচ্ছা করলেই একদিনেই নগরের উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়, এজন্য সময় লাগবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সিটি এলাকায় রাস্তা নির্মাণ, প্রশস্থকরণ, বৃক্ষরোপন করা হবে। প্রথমে ৮টি থানা এলাকায় কবর স্থান নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কবরস্থান করা হবে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে টঙ্গীব্রীজ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মহাসড়কে সরকারি প্রজেক্টের কাজ চলছে। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসন করা একটু কষ্টকর। নগরীতে ৮টি খাল খনন করে এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এলাকার পয়োনিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতায়তের সুবিধার্থে খালের পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে।

এলাকায় বর্জ্য অপসারণে সুইপার নিয়োগের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, সিটিতে এক/দেড়শ’ পরিস্কার পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই নাগরিকদেরও এ কাজে সহযোগিতা করতে হবে। সিটি এলাকায় ময়লা রাখার কোন সরকারি কোন জায়গা নেই, এজন্য সরকারের কাছে জমি চেয়েছি। প্রতিদিন তিনহাজার টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশী প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হবে। ১২শ’ কোটি টাকার বর্জব্যস্থাপনার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছি।

তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মহাসড়কে যানজট নিরসনে সম্প্রতি অটোরিকশা চলাচল ইতোমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে মহাসড়ক, সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কার করা হচ্ছে। মহাসড়কে এসিবাস ও বিকল্প ছোট গাড়ি রাস্তায় নামানো হবে। আগামি রমজানেই এর কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া মহানগরের চারপাশে বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পণা রয়েছে। এসময় তিনি মহানগরীর রাস্তার পাশে ও খোলা জায়গায় গাছ লাগিয়ে নগরীকে সবুজায়ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারি সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। জবাবদিহিতা যেমন উন্নয়ন নিশ্চিত করে তেমনি কাজে স্বচ্ছতা আনয়ন করে। স্বচ্ছতার জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের অনলাইনে টেন্ডার দিচ্ছি। যাতে পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে ঠিকাদাররা এ টেন্ডারে অংশ নিতে পারে। কাউকে মুখ চিনে চিনে কোন ওই কাজের টেন্ডার দেয়া হবে না।

মেয়র নগরবাসীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, নগরীর প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যদি কোন শিক্ষার্থীকে কেউ উত্যক্ত করে, তাহলে ওই উত্যক্তকারীসহ তাদের অভিভাবকদের জবাবদিহি করা হবে, বিচারের আওতায় আনা হবে। সকল শিক্ষার্থী ও নাগরিকরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।

তিনি বেকারদের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে বলেন, যারা গাজীপুর সিটির নাগরিক/ভোটার এবং যারা বেকার রয়েছে পর্যায়ক্রমে তাদের শতভাগ কর্মসংস্থান করা হবে।

সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আকবর হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মজিবুর রহমানসহ সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।