প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমেদ শ্রীঘরে রয়েছেন। দুদকের দূর্নীতির মামলায় এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দু’দকের চার্জশিট হওয়ার পর হাজিরা দিতে গেলে সেখান থেকে সে আটক হয় পরে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তিনি ছুটির আবেদনে নকল স্বাক্ষরে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একজন দ্বায়ীত্বশীল ব্যাক্তি। উপজেলার সকল প্রাথমিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন পাশ হয় তারই স্বাক্ষরে। প্রতিদিন অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। বিদ্যালয় ও সাবক্লাস্টার পরিদর্শনসহ নানা নির্দেশনা দিতে হয় তাকে। অথচ অজ্ঞাত কারণে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ছুটির আবেদন পত্রে নকল স্বাক্ষর করে তিন সপ্তাহের বেশী বাইরে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতির কারণে অফিসের কাজের বোঝা বেড়েই চলেছে। শিক্ষকরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করতে না পারায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে যা কোন ভাবেই কাম্যনয়। এসমস্য ঘটনা গুলো যাচাই করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। দুর্নীতির পৃথক দুই মামলায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দু’দক। দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ ওয়াজেদ আলী গাজী আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার্জশিট দুটি দাখিল করেন। শাহবাগ থানায় দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের এক মামলায় মুশতাক আহমদসহ ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের উপ-পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মারা যাওয়ায় তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলায় অপর আসামিরা হলেন-মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানাধীন নগরীপাড়া সরকারি মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মো: জিল্লুর রহমানের বেতন বাবদ সর্বমোট ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছয় শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক স্কেলে বেতন প্রদানের সুপারিশের মামলায় মুশতাক আহমদসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জিল্লুর রহমান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাধ্যতামূলক প্রাথমিকশিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ সওকাত হোসেন।

মুশতাক আহমদ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পরথেকেই প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গণে অনিয়ম নিয়মে পরিণতি হয়েছে। তার এই অনৈতিক কারণে উপজেলা শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার কথা থাকলেও তিনি কর্মস্থলে থাকেন না। অফিসের পুরানো যানবাহন অকশনে বিক্রয় না করে দিনের পর দিন ফেলে রেখে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল হাজিরার মেশিন ক্রয়ের নাম কের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে ১৩৫ টাকা করে গ্রহন করেছে। জোর করে নোটবুক বিক্রয় করেছেন ৩৫/৪০ টাকা করে। বিদ্যালয় থেকে বদলী করতে সৃজন/কর্তন করেছেন ১থেকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে। স্লীপের ৪০,০০০/-হাজার টাকা থেকে ৫,০০০/- টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। পিটিআই প্রশিক্ষনে আসা শিক্ষকদের ডেপুটিশন প্রদান করে ৫/৬ হাজার টাকা আদায় করেন বলেও জানা গেছে। নতুন শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রতারনা করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। আর এই কাজ গুলো একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে গেলে দেখা যায় তার অফিস কক্ষ তালা মারা। তার সরকারি মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমদ বিগত ৭ই এপ্রিল, ৮এপ্রিল থেকে ১৭এপ্রিল পর্যন্ত ৯দিনের নৈমিত্মিক ছুটির আবেদন পত্র আমার কাছে দাখিল করেন। সেই মোতাবেক তাকে ১৭ এপ্রির অফিসে যোগদান করার কথা ছিলো, কিন্তু ১৭ এপ্রিল কর্মস্থলে যোগদান না করে ১৬ই এপ্রিল পূর্ণ ডাক্তারি সনদসহ একটি মেডিকেল ছুটির আবেদন করে। আবেদন পত্রটি যাচাই করে দেখাযায়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কোন স্কাক্ষর নেই। পরে বিষয়টি আমি উপ-পরিচালক খুলনা মহদয়কে অবগত করি। তবে তিনি দুদকের কোন মামলায় জেলে আছেন কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নয়। তাকে অফিসিয়াল ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন আমি তাকে বহিস্কার করতে পারিনা। আর এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি সে সত্যিই জেল আছে কিনা, সে কারণে আমরা এটা প্রথমে খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালকে জানিয়েছি এবং মন্ত্রলয়কে জানাবো। প্রাথমিক শিক্ষা খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মেহেররুন নেছা বলেন, আমরা এখনো পর্যন্ত পুলিশ দপ্তর থেকে বা দুদকের কাছ থেকে আমাদের কাছে কোন কাগজপত্র দেয় নাই, এবং আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমাদের কোন কর্মকর্তা দুদকের কোন দুর্ণীতির মামলায় জেল হাজতে আছে কি না। আমরা লোক মুখে শুনেছি এবং পরে আমাদের ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও)কে আমি বললাম, তখন ডিপিও আমাকে লিখিত ভাবে দিয়েছে যে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সে ছুটির আবেদন দিয়ে চলে গেছে এবং ডিপিও লোক মুখে শুনেছে এরকম ঘটনা। এখন আমরা ডিপিওকে বলেছি প্রমানাদি দলীলসহ আমাদেরকে একটি প্রতিবেদন দিতে। প্রতিবেদন দিলে আমরা পাঠিয়ে দিবো ডিডি অফিস ও মন্ত্রণালয়ে, তখন বিভাগীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাকে সময়িক বরখাস্থ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ডিডি অফিসেও মৌখিক ভাবে বিষয়টি জনিয়েছি এবং শিক্ষা মন্ত্রলয়ের সাঙ্গেও কথা হয়েছে। এখন আমরা দেখি ঝিনাইদহ অফিস প্রমানাদি সহ কিছু দিতে পারে কি না। না দিলে আমরা মন্ত্রণালয় বা ডিডি অফিসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিবো। এখন দুদকের নিয়ম কি আমি তো জানিনা। আমি ঝিনাইদহের ডিপিওকে বলেছিলাম দুদকের সাথে কথা বলতে, সে আমাকে জানিয়েছে দুদকের ডিডি নাকি বলেছে তারা আমাদেরকে কোন তথ্য দিবে না, আমাদের উপরে দিবে। এখন মন্ত্রণালয়ে দিবে কি না জানিনা। তবে ঝিনাইদহ ডিপিও আমাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছে মুশকাত নাকি ঢাকায় হাইকোর্টে হাজিরা দিতে গিয়েছিল তখন তাকে আটক করেছে। এটা মুখে মুখে, এর কোন প্রমান নাই। কিন্তু আমাদের ওই অফিসারের উচিত ছিলো আমাদেরকে জানানো যে তার কি কন্ডিশন বা তার পরিবারকে জানানো উচিত ছিলো। এখন আমরা পড়েছি বিপাকে, কোথায় যাবো কি করবো। যাইহোক আমি ডিডি অফিসে কথা বলেছি, মন্ত্রণালয়েও কথা বলেছি এবং ডিপিও কে বলেছি তুমি একটু দুদকের সাথে কথা বলো। আমরা কোথাথেকে বিষয়টি জানতে পারবো। এই প্রমান গুলো পেলে আমাদের জন্য একটু ভালো হয় আরকি। তো যায় হোক একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবো।