একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জনপ্রিয় এ শিল্পীর মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার দুদিন পর সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও পরে অবনতি হতে থাকে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালীন পরপর তিনবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এর আগে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুবীর নন্দী।সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য সাত দিন আগে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীকে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশে সুবীর নন্দীর চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয় করছিলেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন। গতকাল সকালে তিনি বলেন, ‘বারবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় চিকিৎসকেরা যে আশা করেছিলেন, তা-ও ক্ষীণ হয়ে গেছে। সুবীরের মাল্টিপল অরগান ফেইলিউর হয়েছে। এখনকার অবস্থা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল রাতে পরিবারসহ সিলেট থেকে ফিরছিলেন সুবীর নন্দী। উত্তরার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। এক পর্যায়ে লাইফ সাপোর্টও দেওয়া হয়।
১৮ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় সুবীর নন্দীকে। সেদিন বিকেলেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে বরেণ্য এই শিল্পীর চিকিৎসা শুরু হয়। বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার পৃথক শোকবার্তায় সদ্য প্রয়াত এ শিল্পীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘সুবীর নন্দীর মৃত্যু বাংলাদেশের সংগীত জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, ‘পাঁচবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই জনপ্রিয় শিল্পী তার কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’ এ ছাড়া সুবীর নন্দীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
সুবীর নন্দীর মরদেহ দেশে আসছে আগামীকাল বুধবার। এদিন সকাল ৬টায় তার মরদেহ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে।
দেশের বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, আগামীকাল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে সুবীর নন্দীর মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। বিমানবন্দর থেকে তার মরদেহ আনা হবে ২৫সি গ্রিন রোডের গ্রিন ভিউ অ্যাপার্টমেন্টে।
সেখান থেকে বেলা ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সুবীর নন্দীর মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর মরদেহ নেওয়া হবে রামকৃষ্ণ মিশনে। দুপুরে সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমন্দির ও শ্মশানে একুশে পদক পাওয়া সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে সুবীর নন্দী গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে।তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।
চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। আর চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।
