রমজান উপলক্ষে প্রতিটি বাজারে তালিকা লাগানোর পাশাপাশি কড়াকড়ির চেষ্টা চললেও তা পালন করছেন না ব্যবসায়ীরা। দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের প্রথা অনুযায়ী প্রতিবছর রমজান এলে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ বছরও তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিকেজি দেশি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা, বিদেশি গরুর (বোল্ডার) মাংস ৫০০ ও মহিষের মাংস ৪৮০, খাসির মাংস ৭৫০ এবং ভেড়া ও ছাগির মাংস ৬৫০ টাকা ধরে বিক্রি করতে হবে।

তবে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। নির্ধারিত দামে কোনও ব্যবসায়ী মাংস বিক্রি করছেন না। এজন্য খোদ সংস্থা দুটির ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করেছেন।সিটি করপোরেশন বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে আসছেন।জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার ক বলেন, আমাদের ১৩টি মার্কেট রয়েছে। প্রতিটি মার্কেটে ডিজিটাল মূল্যতালিকা বোর্ডের মাধ্যমে পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। নগর ভবন থেকে সার্ভারে যে দর দেওয়া হবে তা ওই বোর্ডে প্রদর্শন হবে।

চতুর্থ রমজানেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ইফতারের প্রধান সামগ্রী ছোলা, খেসারি, মসুর ডাল, বুট, মরিচ, শসা ও পেঁয়াজ। মাংসের দাম চড়া হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস।

ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম ২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ টাকা, খাসির মাংসের দাম ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। তবে আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। ৫০-৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি।

এদিকে চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় এখনও চড়া দাম সব পণ্যের। ক্রেতাদের অভিযোগ সরবরাহ বেশি থাকার পরও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণহীন এ দামে স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা।

শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ছোলা, খেসারি, মসুর ডাল, বুট ও পেঁয়াজ। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

বাজারগুলোতে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবু হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি বেগুন, কচুরলতি, করলা, পটল, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। ধুনদল, ঝিঙা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি আঁটি লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে পটল ৪০-৫০, সজনে ডাটা ৬০-৮০, বরবটি ৬০-৭০, কচুর লতি ৭০-৮০, করলা ৬০-৭০, ধুন্দুল ৭০-৮০, গাজর ৩০-৪০, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাংস ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রতিবছরের মার্চ-এপ্রিলে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যায়। এবারও বেড়েছে। তবে এবারের দাম বাড়ার প্রবণতা আগের থেকে বেশি ছিল। এখন দাম কমতে শুরু করেছে। সামনে আরও কমবে। কারণ রোজার সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকে।

রায়সাহেব বাজারের ব্যবসায়ী কমল সরকার বলেন, রোজার সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকে। ফলে দাম কমে যায়। আমাদের ধারণা রোজায় ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১২০ টাকায় চলে আসতে পারে।

এদিকে টানা দুই সপ্তাহ দাম কমার পর ডিমের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ৮০-৮৫ টাকায়। মুদি দোকানে ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ৭-৮ টাকায়।

ডিমের পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ দাম। রাজধানীর কারওয়ানবাজার গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ভালোমানের দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি করছেন ১২৫-৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ৩০- ৩৫ টাকা।

রোজায় অপরিবর্তিত বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম। রুই কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৭০০ টাকা, বাইন মাছ ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, পোয়া ৬০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং ৮০০, দেশি মাগুর ৬০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

এর আগে গত সপ্তাহে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমে। রোজা সামনে রেখে মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও শাক-সবজি ও মাছের দাম আগের মতো চড়া রয়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।