পবিত্র রমজান মাসে নগরজীবনে ঘরে-বাইরে সবার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সিয়াম সাধনার এই মাসে রোজাদাররা ঘরে বসে করতে চান ইফতার। প্রতিদিন কর্মব্যস্ততা কাটিয়ে ইফতারের সময় হওয়ার আগেই বাড়ি ফেরার তাগিদ থাকে। কিন্তু বড় বাধা যানজট। এতে নাকাল হতে হয় ঢাকাবাসীকে।

রাজধানীর কলেজগেট,পুরো রাস্তায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি। একটার সঙ্গে আরেকটা গাড়ি প্রায় লাগানো। কলেজগেট থেকে পান্থপথ স্বাভাবিক সময়ে বাসে ২০ মিনিট লাগলেও শনিবার দুপুর ১২টায় এই রাস্তাটুকু পার হতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। তার সঙ্গে রয়েছে অসহনীয় গরম। রোজার মাঝামাঝি সময় থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত রাজধানীবাসীর অনেকটা সময় রাস্তায় কাটে। এবছর রোজার শুরু থেকেই এই ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেলের কারণে রাস্তা সরু হওয়ার দুর্ভোগ।

যানজটের শহর হিসেবে বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ঢাকা শহর। শুধু তাই নয়, সময় অপচয় ও ট্রাফিক অদক্ষতা সূচকেও শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। গত ফেব্রুয়ারিতে বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নামবিও এর প্রকাশ করা ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স-২০১৯তে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮ ও ২০১৭ সালে যানজটে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।

শাহিদুর রহমান শনিবার (১১ মে) মিরপুর থেকে বেলা ১১টায় রওনা দিয়ে সোবহানবাগ পৌঁছান বেলা ১টায়। সায়েন্সল্যাব যাওয়ার কথা থাকলেও বাসের গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি নেমে পড়েছেন সোবহানবাগে। রাস্তা পার হয়ে ফিরতি গাড়িতে বাসায় ফিরবেন। তিনি বলেন, পুরো পথেই রাস্তার দুই পাশে যানবাহন থেমে থেমে চলছে। ঈদের কেনাকাটা অনেকেই রোজার শুরুতেই সেরে ফেলতে চান। তাই বলে এই অবস্থা হবে কে ভেবেছিল?

বিলকিস আখতার থাকেন কলাবাগান। বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে ৪০ মিনিটেও পান্থপথে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, মেইন রাস্তার এত বাজে অবস্থা যে আমি গলির মুখ থেকেই বের হতে পারলাম না। তাকিয়ে তাকিয়ে বাইরে হেঁটে যাওয়া খেটে খাওয়া মানুষদের দেখছিলাম আর ভাবছিলাম রোজা রেখে কী ভয়াবহ কষ্টে পড়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু রুমানা হক। তিনি বলেন, আজ শনিবার, ছুটির দিন ঈদের কেনাকাটা, এজন্য এরকম তা আমার মনে হয় না। ঢাকার রাস্তায় এত গাড়ি, এগুলো চলাচল করতে পারছে না। গতি পাবে কোথা থেকে। আমি প্রতিদিন ওয়ারী থেকে বের হয়ে বসুন্ধরা সিটিতে আসি। কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। ট্রাফিকের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার মোটামুটি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে আসতে। বেশিরভাগ সময় গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে মানুষ। রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে কী পরিস্থিতি হবে কে জানে।

রিকশাচালক রুক মিয়া মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা নিয়ে বের হন সকাল ৭টার ভেতর। প্রতিদিন কমপক্ষে ১২টি গন্তব্যে যেতে হয়, না হলে পোষায় না তার। তিনি বলেন, এখন ৭টার বেশি পারা যায় না। জ্যামে বসে থাকি, অনেক সময় যাত্রী বিরক্ত হয়ে অর্ধেক টাকা দিয়ে চলে যায়।

ঠিক কবে নাগাদ স্বস্তির বৃষ্টি আসবে সেই আগাম বার্তা দিতে পারেনি আবহাওয়া অধিদফতর। তারা বলছে, রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ চলছে। গত চার দিন ধরে দেশে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম। তাদের হিসেবে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রোজার সময় বিকেলে বাসে ওঠার জন্য প্রচুর লোক জড়ো হবেন। বাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভিড়ও বাড়বে। এর মধ্যে যদি টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, তাহলে রাজপথে যানজট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বৃষ্টি, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ও পথচারী চলাচলের পর ঢাকা মহানগরীর মার্কেট বা শপিং সেন্টারগুলোয় ভিড় রমজান মাসে দুর্ভোগ আরও বাড়াতে পারে।