বাড়ির ভিটে বেঁচে জামাইকে সেনাবাহিনীতে চাকুরি দিয়ে মেয়ের সুখ কিনেছি, হায়রে কপাল। ওরা আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। শনিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে এমন আকুতিই করলেন নীলা আক্তার নীপার রিক্সা চালক দরিদ্র বাবা নুর জামাল।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা গ্রামের নীলা আক্তার নীপা নামের (১৯) এক গৃহবধূকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করেছেন নিহত গৃহবধূর স্বজনেরা। অবশ্য, পুলিশ বিষয়টি ধামা চাপা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। পুলিশ এটিকে হত্যা নয়, আত্মহত্যা বলে দাবী করছে।

নিহত গৃহবধূ নীলার বাবা দরিদ্র রিক্সা চালক নুর জামাল জানান, দেড় বছর আগে মেয়ে নীলার সাথে রিপনের বিয়ে হয়। বিয়ের যৌতুক হিসেবে তিনি ৭ লাখ টাকা দিয়ে জামাই রিপনকে সেনাবাহিনীতে চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন বলে জানান তিনি। নুর জামাল বলেন, মেয়ের গায়ের রং শ্যামলা হওয়ায় বিয়ের পর থেকেই জামাই মেয়ের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। শনিবার দুপুরে নীলাকে স্বামী রিপন ও বাবা শাহ আলম এবং মা আঞ্জুয়ারা পরিকল্পিত ভাবে গলায় ওড়না দিয়ে পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর আত্মহত্যা করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে আগেই মারা গেছে এমন তথ্য জানালে হাসপাতাল থেকে রিপন তার বাবা ও মাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

নীলার দাদা হাসান আলী মোল্লা বলেন, নুর জামাল বাবার থেকে প্রাপ্ত পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করে মেয়ের সুখের জন্য জামাইকে সেনাবাহিনীতে চাকুরি দিয়েছিল। তিনি বলেন, নীলা আত্মহত্যা করেছে এমন খবর পাওয়ার পর আমরা ওই বাড়ীতে যাই। কিন্তু যে স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেখানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করার কোন ধরণের অালামত নেই।

হাসান মোল্লা বলেন, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা ঘটনার সময়ে ওই বাড়িতে চেচামেচির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। ১৪/১৫ দিন আগে রিপন ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। বাড়ি আসার পর থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছে বলে স্থানীয়রা নিহত নীলার পরিবারকে জানিয়েছে।

প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে নীলার বাবা নুর জামাল বলেন, মেয়ে বিয়ের দেয়ার পর থেকেই শুনেছি ছেলের বউ পছন্দ হয়নি। তার সাথে অন্য কোন মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে। ছুটিতে আসলেও অধিকাংশ সময়ে সে বাড়ির বাইরেই অবস্থান করতো।

প্রতিবেশীরা জানান, রিপন সেনাবাহিনীতে চাকুরি করলেও বিয়ের কোন অনুমতি না নিয়েই গোপনেই সে বিয়ে করেছেন।

নুর জামাল বলেন, আমি আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। জামাই রিপন, তার বাবা ও মা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করেছি। শুনেছি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে কেন কি জন্য আত্মহত্যা করেছে তা জানিনা।

ওসি নাসির বলেন, অভিযোগ পাইনি। ইউডি মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।