অবৈধ পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশী বোঝাই নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৫ জন। গত শুক্রবারের দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি। এর মধ্যে সিলেটের চার ও মৌলভীবাজারের দুজনের খোঁজ মিলছে না বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।

নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের আব্দুল আজিজ, আহম্মেদ হোসেন, লিটন শিকদার ও আফজাল মাহমুদ। বাকি দুজন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাফিজ আহসান হাবিব ও কামরান আহমেদ। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার হওয়া বেলাল নামে একজন ফোন করে তাদের এ তথ্য দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে দালালদের মাধ্যমে তারা বিদেশে পাড়ি জমায়। ভারত থেকে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ঘটে এ দুর্ঘটনা।

জাতিসংঘের অভিবাসী বিষয়ক সংস্থা-আইএমও বলছে, বৃহস্পতিবার লিবিয়া থেকে ইউরোপের পথে যাত্রা শুরু করে নৌযানটি। শুক্রবার তারা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে। একসময় ঝড়ো হাওয়ার তোড়ে উল্টে যায় নৌকাটি। উদ্ধারে এগিয়ে আসে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রসসহ স্থানীয়রা। জীবিত উদ্ধারকৃতদের দেয়া হচ্ছে সব ধরনের সহায়তা।

জীবিত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে মরক্কোর একজন রয়টার্সকে জানান, ‘আমরা লিবিয়া থেকে রওনা দিয়েছিলাম। প্রথমে বড় নৌকা চাইলেও দালালরা ছোট নৌকায় করে আমাদের পাঠায়। আমাদের মধ্যে বাংলাদেশি সবচেয়ে বেশি ছিলো। ঝড়ের কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হই। কোনো মতে প্রাণে বেঁচেছি।’

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রস বলছে, তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে গতকাল শনিবার সকালে জারযিজ শহরের তীরে নিয়ে আসে। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানায়, ঠাণ্ডা সাগরের পানিতে তারা প্রায় আট ঘণ্টা ভেসে ছিল। উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই বাংলাদেশি। এ ছাড়া মরক্কো, মিসর ও আফ্রিকার রয়েছে বেশ কয়েকজন।

তিউনিসিয়ার এজেন্সি তিউনিস আফ্রিক প্রেসের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় জুয়ারা উপকূল থেকে একটি বড় নৌকায় ৭৫ অভিবাসী যাত্রা শুরু করে। পরে তাদের একটি ছোট নৌকায় তুলে দেওয়া হলে দুর্ঘটনা ঘটে। নৌকাটি শুক্রবার সকালে তিউনিসিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে জার্জিস উপকূলে নিয়ে আসে।

তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা বলেছেন, নৌকাটি ইতালির দিকে যাচ্ছিল। এতে শুধু পুরুষ অভিবাসী ছিল। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিল ৫১ জন। এছাড়া তিন মিসরীয়, কয়েকজন মরক্কান, চাদ ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশে মানুষ ছিল।

জীবিত বাংলাদেশির মধ্যে আহমেদ বেলাল নামের এক জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সমায় প্রাণ গেছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের।