এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে বিদেশ থেকে মশা কিনে আনার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। বিশেষ ব্যাকটেরিয়াযুক্ত ওই পুরুষ এডিস মশা কেনার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মশা কেনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করেছে। কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে পুরো বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রাশিদুজ্জামান খান বুধবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিষয়ক অবহিতকরণ সভায় এই তথ্য জানান তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডা. রাশিদুজ্জামান জানান, বর্তমানে চীনসহ বিশ্বের ১৭টি দেশ এমন একটি প্রকল্প নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তাদের প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। তারা সফল হলে বাংলাদেশও এমন প্রকল্প গ্রহণ করবে।

সভায় বলা হয়, যদি দেশে চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করে তখন স্ত্রী এডিস মশা ধ্বংস করতে দেশে দুই তিন লাখ পুরুষ এডিস মশা আমদানি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে সেটা হতে ৫ বছরও লাগতে পারে আবার এরচেয়ে কম সময়ও লাগতে পারে। ডা. মো. রাশিদুজ্জামান খান বলেন, বিশ্বের ১৭টি দেশে এডিস মশা ধ্বংস করতে একটি প্রকল্প নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরুষ এডিস মশার শরীরে ‘উলভাকিয়া’ নামের ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। আর ওই পুরুষ মশাটি স্ত্রী এডিস মশার সংস্রবে গেলে স্ত্রী মশাটিও প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এভাবেই বিশ্ব থেকে এডিস মশার বিস্তার রোধ করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এখনও পরীক্ষাধীন পর্যায়ে থাকলেও চীন এরইমধ্যে উৎপাদনে গেছে। ওই প্রকল্পটি সফল হলে পুরুষ মশা আমদানি করে কীভাবে দ্রুত এই দেশ থেকে এডিস মশা বিতরণ করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ কাজ শুরু করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে কাজ করছে।

উলভাকিয়া: কীভাবে কাজ করবে এই প্রকল্প?

বিভিন্ন দেশে কোন পদ্ধতিতে এই প্রকল্পের সফল পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে তা বিবিসি বাংলার কাছে ব্যাখ্যা করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আখতারুজ্জামান।

“উলভাকিয়া ইনফেক্টেড পুরুষ মশা পরিবেশে ছেড়ে দেয়ার পর তারা নারী মশার সাথে মিলিত হয়ে নারী মশাদের ডিম তৈরি করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।”

আখতারুজ্জামান জানান, এর ফলে একটি এলাকার এডিস মশার ঘনত্ব ৫০ ভাগ বা কখনো তার চেয়ে বেশি পরিমাণে কমে যায়।

“যেই মশার মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়, সেই মশাটির সংখ্যা যখন পরিবেশে কমে যায় তখন ঐ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনাও কমে যায়।”

এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশে এই প্রকল্পের পরীক্ষামূলক বাস্তবায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হতে পারে বলে জানান মি. আখতারুজ্জামান। তবে এধরণের কোনো প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণের আগে অনেকগুলো বিষয় যাচাই করা প্রয়োজন বলে জানান আখতারুজ্জামান।

“এধরণের প্রকল্প গ্রহণের আগে পুনঃস্তরবিন্যাসকরণ, পরিবেশগত প্রভাব যাচাই, মানুষের ব্যবহারের ধরণ, সামাজিক ও ধর্মীয় দিকসহ নানা বিষয় যাচাই করা হয় এবং বিভিন্ন স্তরের মানুষের মন্তব্য নেয়া হয়।”

আখতারুজ্জামান জানান, এই প্রকল্পটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এখনো এবিষয়ে কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত আসেনি।

“কারিগরি কমিটি একটি মতামত দেয়ার জন্য বলেছে। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বেশকিছু প্রতিষ্ঠান, গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ মশা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের সাথে বসে ঠিক করা হবে যে এই উলভাকিয়া প্রজেক্টটি বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে কিনা।”

আর যাচাই-বাছাই শেষে যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে হয়তো ডেঙ্গু প্রতিরোধে ‘উলভাকিয়া’ সংক্রমিত মশা ব্যবহারের চিন্তা করা হবে।