বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদারীপুর পুলিশ লাইন সংলগ্ন মাদারীপুর – শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের পানিছত্র এলাকায় কার্গো ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে মো. আমীর হামজা (৩২) নামের মসজিদের এক মুয়াজ্জিন নিহত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ,গতিরোধক ব্যবস্থা ও জ্রেবা ক্রসিং না থাকায় এ দুঘর্টনার শিকার হয়ে নিহত হন শহরের আলজাবির হাই স্কুল মসজিদের এ মুয়াজ্জিন। এভাবে প্রতিনিয়িত মাদারীপুরে সড়ক দুঘটনায় অনেক প্রানহানীর ঘটনা ঘটছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে গত ৫বছরে প্রায় অর্ধশত লোক সড়ক দুর্ঘনায় নিহত হয়েছে। তবে সরকারীভাবে এর সংখ্যা জানা যায়নি।

মাদারীপুর শহরের উপর দিয়ে চলে গেছে খুলনা-মাদারীপুর-শরীয়তপুর- চাদপুর- চট্রগ্রাম মহাসড়ক। যে কারনে দুরপাল্লার যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি ও গতিশীলতা পাওয়ায় মাদারীপুর শহরের এ মহাসড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে। দুরপাল্লার এ ঝুকিপুর্ন সড়কটি এখন মরনফাদে পরিনত হয়েছে। প্রায় এখানে সড়ক দুঘটনায় প্রানহানীর ঘটনা ঘটলেও নেয়া হয়নি তেমন কোন প্রতিরোধকমুলক ব্যবস্থা। বিষয়টি নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যাথ্যা নেই।

মাদারীপুর শহরের উপর চলে যাওয়া মহাসড়ক ও সড়কগুলোতে জেব্রা ক্রসিং নেই বললেই চলে। যাও আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। নেই গতিরোধক তেমন ব্যবস্থা। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক ,মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারী। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এটি পৌর সভার দায়িত্ব, আবার পৌরসভা বলছে সড়ক ও জনপদের দায়িত্ব। সমস্যার সমাধান না করে একে অপরের কাছ থেকে দায়িত্ব সরে নিতেই ব্যস্ত। শহরের কলেজ রোড মোড়, নিরাময়(প্রা:)হাসপাতাল সদর হাসপাতাল প্রেসক্লাব, বটতলামোড় মিলনসিনেমা সড়ক, সরকারী সুফিয়া মহিলা কলেজ,দরগাহ শরীফ কুলপদ্দি চৌরাস্তা মোড়, পানিছত্র , চিলডেন গ্রেস স্কুল মোড় মাদারীপুর সদর থানার মোড় ইটেরপুল তরমুগরিয়া বালুঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর সামনে জেব্রাক্রসিং ও পুরান বাজার,চরমুগরিয়া বাজার, টার্মিনালসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ জরুরি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারপুর মাদারীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টেনিসক্লাবসহ কিছু সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও জনবহুল এলাকায় গতিরোধক ও শুধু সাদা রং দেওয়া, অথবা গতিরোধক ও সাদা রং দেওয়া দুটোই রয়েছে। শহরের সরকারি ডনোভান বালিকা বিদ্যালয়, মাদারীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারী নাজিউদ্দিন কলেজ চরমুগরিয়া কলেজ শহরের খ্যাতনামা চিলডেন গ্রেস স্কুলসহ অধিকাংশ স্কুল কলেজের সামনে নেই গতিরোধক ও জেব্রাক্রসিং। জনসমাগমস্থল এসব এলাকাগুলোতেও জেব্রা ক্রসিং, গতিরোধক, ফুটওভারব্রিজ কোনোটাই নেই। আর যেসব আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই পথচারীদের এলোমেলোভাবে যানবাহনের ফাঁকে ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পারাপার হতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মাদারীপুরে জেব্রা ক্রসিং নেই বললেই চলে। ৩-৪ টি জায়গায় আছে। মাদারীপুর পৌরসভা ও সড়ক বিভাগ চিহ্নিত করবে কোথায় হবে জেব্রা ক্রসিং। রংও তারাই করবে। তারা সে মোতাবেক কাজ করবে। এ বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই।

মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, জনসাধারণের নিরাপদে চলাচলের জন্য জেব্রাক্রসিং খুবই দরকার। এখন যেহেতু মাদারীপুর এখন ভৌগলিকভাবে বড় শহরে পরিনত হচ্ছে সেহেতু তাই ট্রাফিক সাইন র্বোডও দরকার। বড় বড় রাস্তায় এটা বেশি দরকার আর এগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় বিধায় জেব্রাক্রসিং, গতিরোধকসহ অন্য বিষয়গুলো তারাই দেখবে। এ বিষয়ে পৌরসভার তেমন কিছু করার থাকে না। পৌরসভার আওতাধীন রাস্তাগুলোতে প্রয়োজন বোধে স্থানীয় কাউন্সিলরের সুপারিশের মাধ্যমে জেব্রাক্রসিং দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, মাদারীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ও মাদারীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরকারী নাজিম উদ্দিন কলেজ মোড় তিনটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি, তাই এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ন স্থানে ফুটওভার ব্রিজ অতীব জরুরি। সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। । জনবল স্বল্পতার কারণে করতে পারছেন না।

এ দিকে সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, খুলনা থেকে মাদারীপুর শহরের উপর দিয়ে যে মহাসড়কটি চট্রগ্রাম চলে গেছে মুলত এ মহাসড়কের কিছু স্থানে জ্রেবা ক্রসিং ও গতিরোধক ব্যবস্থা আছে। আরো জ্রেবা ক্রসিংও গতিরোধক ব্যবস্থা দরকার । ফুটওভার ব্রীজ আপাতত তেমন দরকার নাই। তবে পর্যায়ক্রমে যৌক্তিকতা অনুসারে হতে পারে। এ মুর্হুতে যেসব স্থানে জরুরী ভিত্তিতে দরকার যেখানে জেব্রাক্রসিং এবং গতিরোধক ব্যবস্থা নেয়ার যথাশীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে অনাকাঙ্খিত সড়ক দুঘর্টনারোধে।

সাবরীন জরেীন,মাদারীপুর.