ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলী মাঠের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব দিন দিন বেড়েই চলেছে। ড্রেজারে ফসলী মাঠের বালু মাটি পাচার করে দৈনিক মোটা অংকের কালো টাকার নেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় গ্রাম্য মাতুব্বররা ফসলী মাঠের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রমরমা বালু মাটির ব্যবসা করে চলেছেন।

এতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে উপজেলার আবাদী ফসলী মাঠ। উপজেলা সদর ইউনিয়নের আলম নগর গ্রামের উর্বরা ফসলী মাঠের মধ্যে মোশারফ প্রামানিক(৪৫) ও পার্শ্ববতী কারিকর ডাঙ্গী গ্রামের ফসলী মাঠে ইউসুফ হোসেন (৪২) দু’টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে ধ্বংস করে চলেছে ফসলী মাঠ।

এ ব্যপারে গত শুক্রবার উপজেলা সদর ইউনিয়নের কেএম ডাঙ্গী গ্রামে ফসলী মাঠ বিধ্বংসী ড্রেজার মালিক মোঃ মোশারফ প্রামানিককে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যান আমার আতিœয়, তার সাথে আলাপ করেই ড্রেজার দিয়ে ফসলী মাঠের বালু মাটি কাটছি। পার্শ্ববতী কারিকর ডাঙ্গী গ্রামের ফসলী মাঠের মধ্যে বালু উত্তোলনকারী আরেক ড্রেজার মেশিন মালিক ইউসুফ হোসনে জানায়, আমরা স্থানীয় এমপি’র নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই ফসলী মাঠের মাটির ব্যাবসা করে চলেছি। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন মোশা বলেন, ওই গ্রামে ড্রেজার মেশিন মালিক ও বালু মাটি ব্যবসায়ী মোশারফ প্রামানিক আমার আতিœয় ঠিকই। সে অনেক দিন আগে মসজিদের কাজে ড্রেজারে কিছু মাটি কাটার কথা বলছিল। তাই বলে আমি তাকে ফসলী মাঠ ধ্বংস করার কথা বলিনি।

একই সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সি.এ জামাল হোসেন জানান, ফসলীী মাঠে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা বহুবার নিষেধ করার পর উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে চলমান ড্রেজারের ব্যাপারে বেশী মাতামাতি করতে নিষেধ করেছেন, বিধায় আমরা চুপ হয়ে গেছি। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানা বলেন, “আমি পনের দিন বিদেশ ট্যুরে ছিলাম বিধায় ড্রেজারের বিষয়টি অবগত ছিলাম না। উপজেলার সবক’টি অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের আলম নগর গ্রামের উর্বরা বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এলাকার মাতুব্বররা মোশারফ প্রামানিক প্রায় ২০ দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বালু মাটির ব্যবসা। তারা মাঠের মধ্যে দিয়ে ড্রেজার মেশিন সংযুক্ত পাইপ লাইন সম্প্রসারন করে আশপাশের গ্রামগুলোতে মাটি পাচার করে চলেছে। উক্ত ড্রেজার মেশিন থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পার্শ্ববতী এমপি ডাঙ্গী গ্রাম, প্রারামানিক ডাঙ্গী গ্রাম ও সর্দারবাড়ী গ্রামের বিভিন্ন বসতভিটে ভরাট, পুকুর, নালা ও ডোবা ভরাট কাজের জন্য মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি এক হাজার ফিট মাটি ৯ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। নিয়মিত ড্রেজার মেশিন চালানোর ফলে ফসলী মাঠের মধ্যে খাড়া গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ড্রেজারে খননকৃত জমির আশপাশের ফসরী মাঠ ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উক্ত ড্রেজার মেশিনের পার্শ্ববতী কারীকর ডাঙ্গী গ্রামের ফসলী মাঠে মোঃ ইউসুফ হোসেন (৫০) নামক আরেক ড্রেজার মালিক রমরমা বালু মাটি পাচারের ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ড্রেজার মেশিন থেকে মৌলভীরচর গ্রাম, আঃ মজিদখার ডাঙ্গী গ্রাম ও করিম মৃধা ডাঙ্গী গ্রামের বসতিদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বালু মাটি পাচার করা হচ্ছে। ফসলী মাঠ ধ্বসে পড়ার শঙ্কায় ওই গ্রামের কৃষক আঃ জব্বার (৪৮) সহ অনেক চাষী জানান, ফসলী মাঠ ধ্বংসকারী মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বলার হিম্মত আমাদের নাই, তারা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ড্রেজারে মাটি ব্যবসা করে চলেছেন।