খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বিচার কাজ পরিচালনার জন্য কেরানীগঞ্জে অস্থায়ী আদালত স্থাপন অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

মঙ্গলবার (২১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ মানববন্ধন আয়োজন করে।ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তাকে কেরানীগঞ্জের আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে। এই আদালত স্থাপন করা সংবিধান পরিপন্থী। আমরা মনে করি সংবিধানের যে মৌলিক অধিকার একজন নাগরিককে দেওয়া হয়েছে, সেই নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আমরা খুব শিগগিরই কেরানীগঞ্জে আদালত স্থাপনের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করব।

তিনি বলেন, নির্জন একটা অবস্থা সেখানে। কেরানীগঞ্জ একটা উপজেলা। সেখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আদালতের যে পরিবেশ থাকা প্রয়োজন, সে ধরনের কোনো পরিবেশ সেখানে নেই। সেখানে আইনজীবীদের যাওয়া-আসায় চরম দুর্ভোগ। বই-পুস্তক নাই, লাইব্রেরি নাই। আদালত পরিচালনা করার জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ সেখানে নেই।

আদালত স্থানান্তর ইস্যুতে আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই উল্লেখ করে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই। আইনের আশ্রয় নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। ঘটনা ঘটল এখানে (ঢাকা), কিন্তু কেরানীগঞ্জে বিচার হবে। অথচ আইনে আছে, যেখানে ঘটনা ঘটবে, সেখানেই বিচার হতে হবে। কিন্তু সেখানে না করে কেরানীগঞ্জে বিচার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা লড়ে যাব, লড়তেই থাকব।

খালেদা জিয়ার এত দিন জেলে থাকার কথা নয় উল্লেখ করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, উনার সাজা হয়েছিল পাঁচ বছরের। একটা ভুয়া মিথ্যা, অসত্য মামলা দিয়ে তার সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সবই ছিল সরকারের পরিকল্পনা। কিন্তু তার পরও পাঁচ বছর সাজার পর যখন আপিল ফাইল করা হল, তখন আমরা ধরে নিয়েছিলাম, সেদিনই জামিন মঞ্জুর হবে। কিন্তু সেই জামিন মঞ্জুর হয়েছে অনেক পরে। তারপরও সরকারের বিভিন্ন কলাকৌশল ও ষড়যন্ত্রের কারণে বেগম জিয়া জামিনে মুক্তি পাননি।

মওদুদ আহমদ বলেন, তারা (সরকার) চায় না বেগম জিয়ার মুক্তি হোক। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ চায় বেগম জিয়া মুক্ত হোক। সুতরাং জনগণের ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ হবে। আজকে না হোক কাল বেগম জিয়া মুক্ত হবেন, দেশের গণমানুষের দাবি নিয়ে এগিয়ে যাবেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে শামিল হবেন।

আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আইনগতভাবে যতটুকু করা সম্ভব, আমরা করছি। কিন্তু সরকারের কূটকৌশলের কারণে আমরা সফল হতে পারছি না। তারপরও আমাদেরকে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, আন্দোলন ছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব হবে না। এটা আমরা সবাই বুঝি।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী, কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপি নেতা শিরিন সুলতান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, ড্যাব নেতা ডা. সিরাজউদ্দীনসহ অন্যরা।