মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও জব্দে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন,তা বাস্তবায়ন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। কেন তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করা হবে না, তা জানাতে চেয়ারম্যানকে আগামী ১৬ জুন সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এই তলবের আদেশ দেয়।

শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটি রিট আবেদনে গত ১২ মে হাই কোর্টের এই বেঞ্চ বাজার থেকে ওই ৫২ খাদ্যপণ্য দ্রুত অপসারণ করে ধ্বংস করার আদেশ দেয়।

শুনানির সময়ে আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, পণ্য জব্দ ও প্রত্যাহার করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আপনারা একটি মসলার প্যাকেটও জব্দ করতে পারেননি। ভদ্রতার একটি সীমা আছে। ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না। আপনারা চিঠি দিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন, কিন্তু পণ্য জব্দ বা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেননি। ইস্কাটনের অফিসের পাশে ১৭ জন (মোট জনবল) ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ মিলে একটি পণ্যও জব্দ করতে পারলেন না? আপনাদের অফিস রাখার দরকার কী? ভয় পাচ্ছেন? বড় বড় ব্যবসায়ী (পণ্য উৎপাদনকারী) কী করে ফেলেন বা কী করবেন। এমনটি হলে চাকরি করার দরকার কী?

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত আরও বলেন, ঘরে গিয়ে রান্নাবান্নার কাজ শুরু করে দেন। নতুবা ব্যাংকে গিয়ে কেরানির চাকরি করতে বলেন। বসে বসে টাকা গুনবেন, টাকার হিসাব রাখবেন।আদালত এও বলেছেন, হাইকোর্টকে কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন? আমরা এগুলো বুঝি। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সোজা না বলে বাঁকাভাবে বলছেন।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানান,তিনি রাতে নির্দেশনা বাস্তবায়নবিষয়ক প্রতিবেদন পেয়েছেন। এই আইনজীবীকে আদালত বলেন, আরেকটা অজুহাত দিলেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমসংক্রান্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, আমরা আশা করব, বছরজুড়ে প্রতিষ্ঠানটি এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

পাশাপাশি এসব পণ্য মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলা হয় আদালতের আদেশে।নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় সেদিন।

পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:সরিষার তেল- সিটি অয়েল মিলের তীর, গ্রিন ব্লিসিং ভেজিটেবল অয়েল কোম্পানির জিবি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা, শবনম ভেজিটেবল অয়েলের পুষ্টি ব্র্যান্ডগুলো।

লবণের মধ্যে রয়েছে- এসিআই, মোল্লবো সল্ট, মধুমতি, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নূর স্পেশাল ব্র্যান্ডগুলো।মসলার মধ্যে রয়েছে- ড্যানিশ, ফ্রেশ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল, প্রাণ ও সান এর গুঁড়া হলুদ; এসিআই ফুডের পিওর ব্র্যান্ডের গুঁড়া ধনিয়া।

লাচ্ছা সেমাইয়ের মধ্যে রয়েছে- মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েলফুড, বাঘাবাড়ি স্পেশাল, প্রাণ, জেদ্দা, কিরণ ও অমৃত ব্র্যান্ডগুলো।নুডলসের মধ্যে রয়েছে- নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলি নুডলস। কাশেম ফুড প্রোডাক্টের সান ব্র্যান্ডের চিপসও এই তালিকায় রয়েছে।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।কিন্তু সেখানে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির তথ্য না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করে হাই কোর্ট।

গত ২ মে শিল্প মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বিএসটিআই রোজার আগে বাজার থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫২টি নিম্নমানের পণ্য চিহ্নিত করেছে।এসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এরপর এসব খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার, জব্দ ও মান উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটি (সিসিএস)র পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান এই রিট আবেদন করেন।আদালত ওই ৫২ পণ্য বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়ার নয় দিনের মাথায় ঢাকার বড় বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ পণ্য দোকান থেকে প্রায় উঠে গেছে। দোকানিরা বলেছেন, আদালতের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে তারা পণ্যগুলো বিক্রি করছেন না, আবার কোম্পানিগুলোও সেগুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছে।