আবারও নরেন্দ্র মোদি। ভারতের মানুষ তাঁকেই আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। আবারও সরকার গঠন করবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। জোটের বাইরে দলগতভাবে আরো বেশি শক্তি অর্জন করেছে বিজেপি। ২০১৪ সালে এককভাবে ২৮২টি আসনে জয় পায় দলটি। ২০১৯ সালে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলে দেখা যায়, ২৯৪টি আসনে এগিয়ে আছে বিজেপি।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়। ভোটের ফল পুরো ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মে সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ভোটের ফলে বিজেপির জয়জয়কার হতেই নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে যাওয়ার কথাও জানান মোদি। সেখানে তিনি বিজেপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামীকাল শুক্রবার দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা ডেকেছেন তিনি।

এরই মধ্যে টুইট করে দেশবাসীকে স্বাগত জানিয়েছেন মোদি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, সবার সাথে + সবার উন্নয়ন + সবার বিশ্বাস = বিজয়ী ভারত।

লোকসভার ৫৪২টি আসনের ফল ঘোষণা হতেই দেখা যায় ৩৫০টি আসনে এগিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। যার মধ্যে বিজেপি একাই এককভাবে ম্যাজিক ফিগার ২৭১টি আসন পেরিয়ে গেছে। বিজেপি এককভাবেই প্রাথমিকভাবে এগিয়ে রয়েছে ২৯৪টি আসনে।

অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) জোট পেয়েছে মাত্র ৮৫টি আসন। যার মধ্যে এককভাবে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৫২টি আসনে। অন্যরা এগিয়ে আছে ১০৭টি আসনে।চলতি নির্বাচনে বিজেপির সাফল্যের পেছনে নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি দলটির সভাপতি অমিত শাহের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। অমিত শাহ নিজেও গান্ধীনগর এলাকায় পাঁচ লাখেরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। অমিত শাহ রাজ্যসভার সদস্য। এবার তিনি লোকসভায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।

ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে সেখানকার জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গড়তে চলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। একইভাবে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। এখন বাকি কেবল আনুষ্ঠানিকতা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর বিজেপি সরকার গঠনের তৎপরতা শুরু করবে।সাত দফার এ ভোটে বিজেপির পক্ষে ফের রায় দেওয়ায় ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলটির সভাপতি অমিত শাহ। আর এ জয়কে ভারতেরই জয় বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে নির্বাচনে জয়ে নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপির নেতৃত্বকে অভিনন্দনে ভাসাচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। বিজেপি অভিনন্দন পাচ্ছে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকেও।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর দুপুরের দিকেই ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্পষ্ট হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, ৫৪৩টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য ২৭২ আসন প্রয়োজন হলেও এনডিএ ৩৩৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। এরমধ্যে কেবল বিজেপিই এগিয়ে ২৯৫টি আসনে। ধারাবাহিকতা অনুসারে আসন দু’তিনটে এদিক-সেদিক হলেও বিজেপির জোটই যে সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।

সরকার চালানোর জন্য বিজেপিকে এমন ম্যান্ডেট দেওয়ায় দুপুরে এক টুইটার বার্তায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, আমরা একসঙ্গে এগোই, একসঙ্গে সমৃদ্ধ হই। আমরা একসঙ্গে দৃঢ় ও অংশগ্রহণমূলক ভারত গড়ে তুলি। আবারও ভারতই জিতে গেলো। বিজয়ীভারত। মোদী সমর্থকদের উল্লাসএর আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তার টুইটার বার্তায় ধন্যবাদ জানান ভারত তথা ভারতবাসীকে। ওই ছবিতে বিজেপির পোস্টার মোদীর পাশেই অমিত শাহর ছবি দেখা যায়। বিজেপি সভাপতি বলেন, এই জয় পুরো ভারতের জয়। এই দেশের তারুণ্য দরিদ্র ও মেহনতি মানুষের আশার আলো। এই মহাবিজয় নরেন্দ্র মোদীজি’র পাঁচ বছরের উন্নয়নমুখী দৃঢ় নেতৃত্বের ওপর জনগণের আস্থার প্রকাশ। আমি বিজেপির কোটি কর্মীদের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদীজিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

অমিত শাহর আগে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক সভাপতি রাজনাথ সিং অভিনন্দন জানান মোদীকে। তার ভাষ্যে, এ ঐতিহাসিক জয় নরেন্দ্র মোদীর বিচক্ষণতা ও দলীয় সভাপতি অমিত শাহর দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের ফসল। অভিনন্দন জানান নেত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও।

এদিকে বিরোধী নেতৃত্বের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিজয়ীদের। যদিও সব কিছু পর্যালোচনা করে ফলাফলের ব্যাপারে নিজেদের মতামত জানাবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও এই ফলাফলে দলটির নেতাকর্মীরা দারুণ হতাশ। খোদ কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীর দিল্লির কার্যালয় দুপুরেও তালাবদ্ধ দেখা গেছে। যদিও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দলের প্রধান রাহুলের বাসভবনে গেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

অন্যদিকে বিশ্বনেতাদের মধ্য থেকে এরইমধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে অভিনন্দন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকে।রাস্তায় রাস্তায় এখন বিজেপি সমর্থকদের উল্লাসবিজেপির জয়ের সুবাসে ইতোমধ্যে ভারতজুড়ে দলটির নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। উল্লাস করছেন রাস্তায় নেমে। জানা গেছে, সন্ধ্যায় মোদী দলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ লাড্ডু কেক কেটে উদযাপন করবেন। সেজন্য প্রস্তুত দিল্লির কার্যালয়।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দফায় ভোট গণনা হবে বিধায় চূড়ান্ত ফল পেতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৯ মে পর্যন্ত ৭ ধাপে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। ২৯টি রাজ্য ও ৭টি কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ৫৪২টি আসনে এ ভোটের আয়োজনে ভারতজুড়ে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। ৫৪৩টি আসনে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ভেলোর আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

প্রায় ১৩২ কোটি জনগোষ্ঠীর ভারতে এবার ভোটার ছিলেন প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ভোটার। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে নজিরবিহীন জয় পেয়ে সরকার গড়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবারের মতো একক দল হিসেবে সরকার গঠনের মতো আসন পেয়ে যায় বিজেপিই। পদ্মফুল ফুটেছিল ২৮২ আসনে। বিজেপি জোটের অন্য দলগুলো পেয়েছিল ৫৫ আসন। অন্যদিকে আগের সরকার চালানো সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পায় মাত্র ৪৪টি আসন। তাদের জোটের দলগুলো পায় ১৫ আসন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৩৪ আসন। তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে পায় ৩৭ আসন।