ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কের কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার দু’টি উদ্বোধন করা হচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই ফ্লাইওভার দুটির উদ্বোধন করবেন। এসময় তিনি ওই মহাসড়কে ৩৩৭.৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অপর ৪টি আন্ডারপাস ও দুইটি সেতুরও উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এতে এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই নিরাপদে বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।

সড়ক ও জনপথের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ সবুজ উদ্দিন খান জানান, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কে ওই দু’টি ফ্লাইওভারসহ ৪টি আন্ডারপাস ও দুইটি সেতু নির্মাণ করা হয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই ওই ফ্লাইওভার দু’টি উদ্বোধন করা হচ্ছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স’র মাধ্যমে ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে নির্মিত ১৬৪৫ মিটার দীর্ঘ ৪-লেনের কোনাবাড়ি ফ্লাইওভার ও ২৮৮ মিটার দীর্ঘ ৪-লেনের চন্দ্রা ফ্লাইওভার, ৪-লেনের কালিয়াকৈর আন্ডারপাস, ২-লেনের দেওহাটা আন্ডারপাস, ২-লেনের মির্জাপুর আন্ডারপাস ও ৪-লেনের ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং ৭০ মিটার দীর্ঘ কড্ডা-১ সেতু ও ১২১ মিটার দৈর্ঘ্যরে বাইমাইল সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এরপরই জনসাধারণের চলাচলের জন্য ওগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সেগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এই মহাসড়কটি সাসেক সংশ্লিষ্ট সকল দেশের মধ্যে দেশীয় ও আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসার এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে যেমন ভ’মিকা রাখবে, তেমনি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও স্বচ্ছন্দ্যময় করবে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের এ অংশে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঈদের আগে শনিবার এ মহাসড়কের কোনাবাড়ি ও চন্দ্রায় ফ্লাইওভার দুটি উদ্বোধন হলে যাত্রীরা এখানকার অসহনীয় যানযট থেকে মুক্তি পাবে। ২৫৫.৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভার দু’টি ্আসন্ন ঈদের আগেই খুলে দেওয়ায় এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই নিরাপদে বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।

সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের একমাত্র করিডোর হচ্ছে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক। ৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে এই মহাসড়কটি উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শনিবারের উদ্বোধনের পর এই মহাসড়কে আরো ৫টি ফ্লাইওভার, ৯টি আন্ডারপাস এবং ধীর গতির যানবাহনের জন্য আলাদা ২টি লেনসহ সড়কের ৪-লেনে উন্নীত করণের কাজ ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি জানান, প্রায় ২১০.৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪-লেন বিশিষ্ট কোনাবাড়ি ফ্লাইওভার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কোনাবাড়ি মূল ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১৬৪৫ মিটার, তবে র‌্যাম্পসহ এ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২০১০ মিটার ও প্রস্থ ১৮.২০ মিটার। এটির স্প্যান সংখ্যা ৪০টি, পাইল সংখ্যা ৬৫২টি এবং পিয়ার সংখ্যা ৩৯টি।
অপরদিকে চন্দ্রা ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫.২১ কোটি টাকা। ৪-লেন বিশিষ্ট চন্দ্রা মূল ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২৮৮ মিটার, তবে র‌্যাম্পসহ এ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ৬৬০ মিটার ও প্রস্থ ১৮.২০ মিটার। এটির স্প্যান সংখ্যা ৭টি, পাইল সংখ্যা ১২৪টি এবং পিয়ার সংখ্যা ৬টি।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্পগুলো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় সম্মতি প্রদান করেছেন। তিনি শনিবার সকালে গণভবন থেকে গাজীপুরের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন। এজন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাট মন্দিরে সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জেলার সকল সংসদ সদস্যগণসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, উপকারভোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।

প্রসঙ্গতঃ দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও মায়ানমার নিয়ে গঠিত হয় South Asia Sub-Regional Economic Cooperation (SASEC) ফোরাম। এ আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের আওতায় ২১টি উপ-আঞ্চলিক সড়ক করিডোর উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরমধ্যে ৪নম্বর করিডোরটি ভুটানের রাজধানী থিম্পু থেকে শুরু করে ভারতের জয়গাও থেকে চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে এবং ৯ নম্বর করিডোরটি নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডু থেকে শুরু করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। করিডোর দু’টি রংপুর-বগুড়া-বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর হয়ে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্রগ্রাম এবং হাটিকামরুল-ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা হয়ে মংলা বন্দরের সঙ্গে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সড়ক সংযোগ স্থাপন করবে। এই দু’টি করিডোরসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য উপ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৭৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের বিশদ ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। ডিজাইনকৃত সড়কগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জয়দেবপুর হতে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় মহাসড়কটির ধীর গতির যানবাহনের পৃথক লেনসহ চার-লেনে উন্নীত করণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে এই মহাসড়কটি উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ মহাসড়কের ৪-লেনে উন্নীত করণের কাজ আগামী ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।