বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার মিঠা পানির চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুই জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছ এ বছর দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম ছেড়েছে। শনিবার (২৫ মে) ভোরে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন নদীর বিস্তীর্ণ অংশের বিভিন্ন স্পটে মা-মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে। এর আগে চলতি মাসের শনিবার (৪ মে) রাতে ও রোববার (৫ মে) ভোরে প্রথম দফায় নমুনা ডিম ছেড়েছিল হালদার মা মাছ।

এর আগে শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় বজ্রপাতসহ প্রবল বর্ষণ। ফলে হালদার সঙ্গে সংযুক্ত খাল, ছরা ও নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়। ওই সময় হতে ডিম সরঞ্জাম নিয়ে নদীর পাড়ে অবস্থান নেন ডিম আহরণকারীরা।

এরপরই ডিম সংগ্রহের জন্য নৌকা, জাল, বালতি ও ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীর বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে ডিম আহরণকারীরা রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। তবে ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, নমুনার পরিমাণ বেশি নয়। এটি ডিম ছাড়ার জন্য এটি মা-মাছের পূর্ব প্রস্তুতি মাত্র।

সরেজমিনে নদীর রামদাশ হাট, খলিপার ঘোণা, অঙ্কুরীঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, নাফিতের ঘাট, আজিমের ঘাট, পোড়াকপালি, সিপাহীর ঘাট, আমতোয়া, মাছুয়াঘোনা, বারিয়াঘোনা এলাকায় শত শত ডিম আহরণকারীকে নৌকা ও ডিম সংগ্রহ করার সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এ সময় ডিমসংগ্রহকারী মৎস্যজীবীরা কেউ সর্ব্বোচ্চ ২০-৩০টি করে কিংবা কেউ সর্বনিম্ন ৫-৭টা পর্যন্ত মা-মাছের নিষিক্ত নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবারের মতো অমাবশ্যায় প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থায় মা-মাছ ডিম ছাড়লেও ডিমের আশায় দীর্ঘদিন ধরে ডিম সংগ্রহকারীরা অপেক্ষামান বলে জানান।

তারা আরও জানান, আজ-কালের মধ্যে মা-মাছ পুরোপুরি ডিম দেবে বলে আশা করছি। তবে সাধারনত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে আমাবস্যা, পূর্ণিমায় মেঘের গর্জন ও প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে নদীতে ডিম ছাড়ে মা-মাছ। তবে অনুকূল পরিবেশ থাকলে যে কোন মুহুর্তে মা-মাছ নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে পারে।

এদিকে, হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শার ডিম আহরণকারী মো. জামশেদ জামশেদ ও উদয়ন বড়ুয়া বলেন, শনিবার ভোরের দিকে হালদা নদীর বিস্তীর্ণ অংশের বিভিন্ন স্পটে নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। এ সময় নদীতে জাল পেতে মা-মাছের ডিমের নমুনা পেয়েছি। পুরোদমে মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নদীতে অপেক্ষা করছি। হালদায় এখন জোয়ার। জোয়ারের পানি বেশি হলে মা-মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা হালদা নদীতে জাল পেতে বসে আছি।

এছাড়া একই উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকার ডিমসংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, দু-চারটি নমুনা ডিম পেয়েছি।আমরা ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সবই আল্লাহর কুদরতের ওপর নির্ভর করছে। হাটহাজারী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল আলম জানান, উভয় উপজেলায় ৫টি হ্যাচারির ১৪৯টি কুয়া ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি করা ১৬০টির মতো মাটির কুয়া ডিম পরিষ্ফুটনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, অল্প নমুনা ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। যেহেতু নমুনা ডিম ছেড়েছে মা-মাছ, সেহেতু এসব মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিম থেকে রেণুতে পরিষ্ফুটনের জন্য হ্যাচারিগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।