প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং দেশকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা। তিনি বলেন, দারিদ্র্য হ্রাসের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সর্বদা একটি লক্ষ্য- দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা, তাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করা।

শনিবার গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও দ্বিতীয় গোমতি সেতু উদ্বোধনের পর সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।

নবনির্মিত সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে খুবই সহায়ক হবে। সেতুগুলো আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বর্তমান বিশ্ব এখন একটি বৈশ্বিক গ্রাম। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সবার সঙ্গে মিলে চলতে হবে। আমরা মনে করি, এই কাজগুলো শুধু আমাদের জন্য নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতেও অনেক অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সড়ক, নৌ, রেলপথ ও বিমান যোগাযোগ উন্নয়ন করছে এবং দেশের জনগণ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির সুফল পাচ্ছে।

ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ কমাতে মেট্রোরেল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,মেট্রোরেলে ১৬টি স্টেশন থাকবে এবং এতে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করা সম্ভব হবে। একবার এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে, ভোগান্তি থাকবে না। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, উন্নয়ন সহযোগী, সর্বোপরি দেশের জনগণের সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে সরকার।

সড়কে চলাচলের সময়, বিশেষ করে রাস্তা পারাপারের সময় জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে সবাইকে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে গত ১৬ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত একই প্রকল্পের আরেকটি সেতু- দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, শিমঝু করপোরেশন, জেএফএফ করপোরেশন ও আইএইচআই ইনফ্রা সিস্টেমস কোম্পানি লি.২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতীর সঙ্গে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। সেতু তিনটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে আট হাজার ৪৮৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ছয় হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালের জুনে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের জুলাইতে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার কারণে নির্মাণকাজ চার মাস বন্ধ থাকে।

পরে সরকার নির্মাণকাজের সময়সীমা ছয় মাস বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাত মাস আগেই সেতু তিনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ নতুন কাঁচপুর সেতু নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এটি পুরানোটির চেয়ে প্রস্থে দুই মিটার বেশি। কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে পুরোনো সেতুর সংস্কারকাজ শুরু করেছে।

এদিকে, ৯৩০ মিটার দীর্ঘ মেঘনা সেতুর নির্মাণে ব্যয় হয় এক হাজার ৭৫০ কোটি এবং ১,৪১০ মিটার গোমতি সেতুর নির্মাণ ব্যয় এক হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কাড্ডা-১, সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে বিমাইল সেতুরও উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নামের আন্তনগর ট্রেনের উদ্বোধন করেন তিনি।