পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে বসলো সেতুর আরেকটি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার)। শনিবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ৩বি বসানো হয়। পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ স্প্যানটি সেতুর ত্রয়োদশ স্প্যান। এটিসহ স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ১১টি স্প্যান ও অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে দুটি স্প্যান। সে হিসেবে ৩বি স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো একাদশতম স্প্যান হবে।

আজকের স্প্যানটি বসানোর পর সেতুর মোট ১ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। জাজিরা প্রান্তে ৯টি স্প্যানের মোট ১৩৫০ মিটার ও মাওয়া প্রান্তের দুটি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী স্প্যান মিলে মোট ৪৫০ মিটার এবং সেতুর মাঝ বরাবর একটি স্প্যান অস্থায়ীভাবে বসানোয় ১৫০ মিটার যোগ করে এই ১ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। তবে স্প্যানগুলো ভিন্ন ভিন্ন মডিউলে বসানোর কারণে দৃশ্যমান অংশগুলো এক সারিতে নয়, বরং বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে।এর আগে পিলারে বসানোর জন্য শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যান ৩বি পিলারের কাছে আনা হয়। তবে সময় স্বল্পতার কারণে এবং কারিগরি জটিলতার কারণে শুক্রবার স্প্যান ৩বি বসানো যায়নি।

এর আগে কয়েক দফায় স্প্যানটি বসানোর তারিখ পরিবর্তন করা হয়। এর আগে পদ্মা নদীতে নাব্য সংকট এবং ১৪ নম্বর পিলারে লিফটিং হ্যাঙ্গার না বসাতে পারার কারণে স্প্যান ৩-বি পিলারের ওপর বসানোর শিডিউল পেছায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ।

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রতিটি স্প্যান বহন করে। এরপর বসানো হয় পিলারের ওপর।

পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার শাওন জানান, পদ্মা সেতুতে দুই ধরনের স্প্যান বসবে। নদীর মধ্যে থাকা ৪২টি পিলারের উপর ৪১টি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) মূলত স্টিলের। আর নদীর দুই পাড়ে থাকা ভায়াডাক্টের ওপর ৭টি করে ১৪টি রেলওয়ে স্প্যান। জাজিরা প্রান্তে ২৩৪টি সুপার-টি গার্ডার ও মাওয়া প্রান্তে ২০৪টি সুপার-টি গার্ডার মিলিয়ে মোট ৪৩৮টি সুপার টি-গার্ডার বসবে। এতে মোট রোডওয়ে স্প্যান হবে ৮৩টি। স্টিলের স্প্যান বা সুপার স্ট্রাকচার বসানো হয়েছে মোট ১২টি। আজ বসবে ত্রয়োদশ স্প্যান। অন্যদিকে রেলওয়ে গার্ডারের স্প্যান বসেছে একটি। তবে রোডওয়ে সুপার-টি গার্ডারের কোনও স্প্যান এখনও বসানো হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এরপর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। ৬ মাস ২৫ দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে জাজিরা প্রান্তের সপ্তম স্প্যান। ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যান এবং মাওয়া প্রান্তে গত ১০ এপ্রিল বসে নবম স্প্যান। জাজিরা প্রান্তে মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ২২ এপ্রিল স্থায়ীভাবে বসে দশম স্প্যান। গত ১৭ মে জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারে জে-৩ স্প্যানটি বসানোর কাজ শেষ হয়। এটি ছিল ১২তম স্প্যান। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান।