গ্রামের বাড়ি গিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য শুক্রবার সকাল থেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভোর থেকেই রাজধানীর রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষরা জড়ো হন। নির্ধারিত যানবাহন না পেয়ে অনেকেই ভোগান্তির অভিযোগ করেন। আবার অনেকেই পূর্বনির্ধারিত যানবাহনেই গ্রামের বাড়ি রওনা হতে পেরেছেন।

ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য যাঁরা ট্রেনের আজকের অগ্রিম টিকেট কিনেছিলেন, তাঁদের বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে অনেক ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। যাত্রীদের নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বা হচ্ছে। তবে দুটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।আজ সকালে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম মাহমুদ সুজন কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি যাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, যাত্রীরা নিরাপদে ও আনন্দে বাড়ি যাচ্ছে। তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তবে সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে জানা যায়, আজ সকাল ৬টায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিল ধূমকেতু এক্সপ্রেসের। সেটি সকাল পৌনে ৮টায় স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে, পরে আড়াই ঘণ্টা দেরিতে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যায়।সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে।তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুরগামী যাত্রীরা। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটির কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ৯টায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেই ট্রেনটি দুপুর ২টা ১০ মিনিটে স্টেশনে আসবে। অর্থাৎ পাঁচ ঘণ্টা দেরির ফেরে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা। তাঁদের স্টেশনে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই গরমের মধ্যে কষ্ট করতে হচ্ছে।

তবে সঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসসহ আরো একটি ট্রেন। কিন্তু নীলফামারী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কথা থাকলেও সেটি সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্টেশনে আসেনি।

এদিকে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পরিদর্শনে আসা রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, এবার যাত্রীদের বড় ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। আনন্দ নিয়ে নিরাপদে ও সাশ্রয়ীভাবে মানুষ বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছে। আমি অনেক যাত্রীর সঙ্গেই কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন, তাঁরা সন্তুষ্ট। যাত্রীদের দাবি, রেল আরো গতিময় হোক।

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে আমরা পরে কথা বলব। দুটি ট্রেন ইনটাইম ছেড়ে গেছে। যে ট্রেনগুলোর দেরি হচ্ছে, সেটি যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর এক্সপ্রেসের দেরি হওয়ার ব্যাপারে রেলপথমন্ত্রী বলেন, এটি যাত্রীরা অবগত আছেন। পরে অতিরিক্ত ট্রেন দিয়ে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।এবার প্রায় নয় দিনের ছুটির ফাঁদে পড়তে চলেছে দেশ। তবে এর মাঝে আগামী সোমবার অফিস-আদালত খোলা। ঈদযাত্রা লম্বা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ওই দিন ছুটি নিয়েছেন। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। পবিত্র লাইলাতুল কদরের বন্ধ রোববার।

মাঝখানে সোমবার অফিস-আদালত খোলা থাকলেও মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটি। পরের দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। অর্থাৎ সোমবার একদিনের ছুটি নিলে নয় দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ।ঈদযাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে পৃথক কন্ট্রোল রুম খুলেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।এসব কন্ট্রোল রুমে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস আজ শুক্রবার থেকে যাত্রা শুরু করছে। এসব ট্রেনের ২০ শতাংশ যাত্রী দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকেট পাবেন।

কন্ট্রোল রুম :বিআইডব্লিউটিএর কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বর হচ্ছে ০১৪০০-১৫০১৫০।ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ০২৯৫৮২৩০৬। ঢাকাস্থ বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ৫৫০৪০৭৩৭ ও মোবাইল নম্বর ০১৫৫০০৫১৬০৬।

এদিকে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ তেমন বাড়েনি। তবে মানুষের কিছুটা ভিড় আছে।

শুক্রবার সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। টিকিট বিক্রেতাদের মতে, আজ সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ চাপ বাড়তে পারে।সরেজমিন দেখা গেছে, সদরঘাটে চাঁদপুর টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ কিছুটা রয়েছে। ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমে যায় চাঁদপুর টার্মিনালে।

চাঁদপুরগামী লঞ্চের যাত্রী আমিন আহমেদ জানান, কোনো বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। ভাড়া আগের মতোই। সিঙ্গেল কেবিন ৫০০, ডাবল কেবিন ৭০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।চাঁদপুরগামী ময়ূর লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা মুসা জানান, যাত্রীদের চাপ এখন কিছুটা কম। যাত্রী হলেই আমরা লঞ্চ ছাড়ব। ভাড়া আগের মতোই।

সদরঘাটে চাঁদপুর টার্মিনালের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা হেদায়েত উল্লাহ জানান, চাঁদপুরের উদ্দেশে ইতোমধ্যে ৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আরও লঞ্চ ঘাটে রয়েছে। যাত্রী পরিপূর্ণ হলেই লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে।অতিরিক্ত যাত্রী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। আমাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠতে দেব না।ঠিক ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বরিশাল টার্মিনালে। অনেকটাই ফাঁকা ছিল সদরঘাটের বরিশাল টার্মিনাল। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশালের উদ্দেশে ঢাকা থেকে মাত্র ৩টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বরিশাল রুটে তিনটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বাড়তি যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে দেব না, এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।জানা গেছে, ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার ৪৩টি নৌ রুটে ২১৫টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে বিশেষ সার্ভিস দেয়ার জন্যও তারা প্রস্তুত। প্রয়োজন মতো লঞ্চ চালু রাখা হবে।বরিশালগামী লঞ্চের যাত্রী, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, টানা ছুটি পেয়েছি। ঈদের আগে আর অফিস করব না। গতকাল অফিস থেকে আগামী সোমবারের জন্য ছুটি নিয়েছি। লঞ্চে ভিড় না থাকায় আজ বাড়ি যাচ্ছি।