সারা দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ বুধবার। তবে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে মুসল্লিদের ঈদের জামাতে অংশ নিতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মুসল্লিরা রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে জড়ো হন।

বুধবার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ঈদের প্রধান এই জামাতে নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ঈদের নামাজে মুসলিম উম্মাহ ও দেশবাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় মুসল্লিরা দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বুধবার সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঈদের নামাজে নানা বয়সী মুসল্লিদের ঢল নামে। সকাল ৭টা থেকেই ঈদের প্রধান এই জামাত জাতীয় ঈদগাহ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আল্লাহু আকবার তাকবির ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে ঈদগাহ ময়দান।

জাতীয় ঈদগাহে আলাদা ব্যবস্থা থাকায় নারী মুসল্লিরাও ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন। সারিবদ্ধভাবে মুসল্লিরা ঈদগাহে প্রবেশ করেন।

নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ ও জাতি তথা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া করেন ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। এসময় আমিন আমিন ধ্বনিতে কান্নায় ভেঙে পড়ে মহান আল্লাহর কাছে জীবনের সকল গোনাহ মাফ চেয়ে ফরিয়াদ করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। নামাজ শেষে ধনী-গরিব নির্বিশেষে কোলাকুলি ও মুসাফাহ করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা।

এদিকে ঈদ জামায়াতকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশ এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তায় ছিলো স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)।এছাড়া র‌্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা ছিলো আশপাশ এলাকায়। ফলে মুসল্লিরা নিরাপদে নামাজ আদায় করেন। তবে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে নামাজ আদায় করতে পারেননি বহু মুসল্লি।

মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার তথ্য সংশোধন করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি আজকের ঈদের কথা জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, বেশ কয়েকজনের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য নিয়ে চাঁদ দেখা কমিটির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে।

আজ সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররমে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদ জামাত হবে।জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের নামাজে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া এবং দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে দুটি বৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী বিভিন্ন ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়েছেন মুসল্লিরা।

ঈদ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি অফিস ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক লেখা পতাকায় সাজানো হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।ঈদ উপলক্ষে কারাগার, হাসপাতাল, সরকারি শিশুকেন্দ্র, ছোটমনি নিবাস ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।এদিকে, জাতীয় ঈদগাহে নির্বিঘ্নে ঈদের জামাত আয়োজনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।