স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষেরা। দীর্ঘ প্রায় নয় দিনের ছুটি শেষে আগামীকাল রোববার থেকে খুলছে অফিস-আদালত। এ কারণে একদিন হাতে রেখেই কর্মজীবীরা ঢাকায় ফিরছেন। ফিরতি পথে ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঢাকায় পৌঁছাতে পেরে দারুণ খুশি ঢাকাফেরত মানুষেরা।

শনিবার (৮ জুন) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা যায়।সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়েই স্টেশনে আসছে। তবে ঈদযাত্রার মত উপচে পড়া ভিড় ছিল না কোনো ট্রেনেই। ফিরতি ট্রেনে যাত্রীদের চাপ একটু কম ছিল। কারণ অনেকেই ছুটি একদিনের বেশি নিয়েছেন। এ কারণে পুরো সপ্তাজুড়েই গ্রাম থেকে মানুষ ঢাকায় আসতে থাকবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।দিনাজপুর থেকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়। ওই ট্রেনের যাত্রী ফাতেমা আক্তার যুথি জানান, বাবা-মাসহ আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎযাপন করে অফিসের কারণে আজই তাকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। আসার পথে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। নিরাপদে ঢাকায় ফিরে তিনি দারুন খুশি।

কিশোরগঞ্জ থেকে এগারসিন্ধুতে ফিরেছেন ডা. এমদাদুল হক। তিনি বলেন, পেশাগত কারণেই দ্রুত ফিরতে হয়েছে। পরিবার-পরিজন রেখেই চলে এসেছি। বাকিরা আগামী সপ্তাহে ফিরবেন। নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর এসে পৌঁছালেও নিরাপদে ফিরতে পেরেছেন, এতেই তিনি খুশি বলে জানান।

এদিকে, বাসে করে নাটোর থেকে থেকে এসেছেন বেসকারি চাকুরিজীবী সজল। তিনি জানান, আজ শনিবার থেকেই অফিস খোলা। এ কারণে রাতেই বাসে উঠেছেন। সকাল সকাল ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। আসার পথে তেমন কোন যানজটে পড়তে হয়নি বলেও তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, যাওয়ার সময় যমুনা ব্রিজের কাছে জ্যামে পড়লেও ফেরার সময় কোনো জ্যামে পড়তে হয়নি। ঠিক সময়েই ফিরে এসেছি। তবে পরিবারের সঙ্গে কাটানো ঈদের সময়গুলো ছিল অনেক আনন্দের। তাদের রেখে চলে আসায় মনটা খারাপ বলেও তিনি জানান।গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার জাকির মল্লিক বলেন, ঈদ শেষে প্রচুর যাত্রী ঢাকায় ফিরছে। প্রতিটি বাসই পূর্ণ হয়ে আসছে। আসার পথে কোনো বাসেই এখন সিট খালি নেই।অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রাক বন্ধ থাকায় সড়কে কোনো যানজট নেই। ফেরিঘাটে হয়তো একটু সময় লাগছে। তবে আসার পথে এবার যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি নেই।

মহাখালীতে কথা হয় কিশোরগঞ্জ থেকে আসা সজিবের সঙ্গে। সজিব বলেন, অফিস থাকায় শনিবারই চলে আসতে হয়েছে। প্রতিবার ফেরার পথে জয়দেবপুরের জ্যামে পড়ি, কিন্তু এবার তা হয়নি। তাই মাত্র তিন ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে।’ তবে ২০০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।ভালুকা থেকে আসা পনু বলেন, রাস্তায় জ্যাম ছিল না। ২ ঘণ্টার মতো লেগেছে। অল্প সময়ে আসতে পেরে ভালো লেগেছে। তিনিও বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন।

মহাখালীর এনা ট্রান্সপোর্টর জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) সৈয়দ আতিকুল আলম বলেন, শনিবার সকাল থেকেই প্রচুর যাত্রী আসছে। বিকালের দিকে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। আর রাস্তায় যানজট না থাকায় যাত্রীরা এখন অল্পসময়ে ঢাকায় আসতে পারছেন।

বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ফিরেছেন স্বপ্না আক্তার ও তার পরিবার। তিনি জানান, ১১ জুন থেকে বাচ্চার স্কুল খুলবে। তাছাড়া রোববার থেকে অফিস ডিউটি শুরু। এ কারণে কষ্ট হলেও বাবা-মাকে রেখে দ্রুতই ফিরতে হয়েছে। তবে সুন্দরভাবেই ঢাকায় ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ঈদের আগে-পরের সাপ্তাহিক ছুটি ও শবে কদর নিয়ে গত ৩১ মে থেকেই মূলত ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়েছিল।