মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা তো চুক্তি করেছি। সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের (মিয়ানমার সরকার) সঙ্গে যোগাযোগও আছে। কিন্তু ওইভাবে তাদের সাড়াটা পাই না। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার আগ্রহী না।

রোববার (৯ জুন) বিকেল ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে ১১ দিনের সফর শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। বিদেশ সফর শেষ করে দেশে ফিরেই প্রতিবারই এমন সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার সফর থেকে ফিরে পরদিনই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের ওপর সবসময়ই নিরাপত্তাজনিত হুমকি থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় এবারের ঈদ উৎসব সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। ঈদের সময় দেশে না থাকলেও প্রতিমুহূর্তের খবর তার কাছে পৌঁছত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক শেখ হাসিনার ফিনল্যান্ড সফরে দেশের ওপর হুমকি নিয়ে করা এক মন্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চান। জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, হুমকি সবসময় আসে, অনেক হুমকি। সব বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে সব তথ্য আছে। তারা সে অনুযায়ী তৎপর। ঈদের দেশের বাইরে ছিলাম। তবু সব তথ্যই আমার কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু আমরা প্রস্তুত। আমি সত্যিই বলব, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। যে জন্য সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত শেষ হয়েছে। প্রতিটি জামাত শেষ হওয়ার পর মেসেজ গেছে। শোলাকিয়ায় এর আগে ঘটনা ঘটেছে। এবার কোথাও কিছু হয়নি। আমাদের বড় শক্তি, আমাদের জনগণ খুব সচেতন। তাদের কাছে আবেদন, তারা যেন সজাগ থাকেন, সতর্ক থাকেন।

এ ধরনের ঘটনা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ৮ শতাংশ জিডিপি। এটা ধরে রাখতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন।এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের কাছেও সেই সহযোগিতা চাই। কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানান।

জাপান সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমাদের ভালো হোটেল ছিল না, সোনারগাঁও হোটেল জাপান সরকার তৈরি করে দিয়েছিল। বন্ধুপ্রতীম দেশ। এবার সফরে নতুন সম্রাট ও আগের সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক আগ্রহ তাদের। কোন কোন বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, সে বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা আছে।

সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমরা চলব। এটা প্রতিটি দেশই জানে, সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যাই, বলি, আমাদের সবার কমন এনিমি আছে, দারিদ্র্য। আসুন, আমরা সাধারণ মানুষের উন্নতিটা করি। সেখানে যত খরচ লাগে, ব্যয় করি। দারিদ্র্যই আমাদের সবার বড় শত্র“। এর বিরুদ্ধে সবাইকে লড়াই করতে হবে, সেটাই সবসময় বলি। হলি আর্টিজানে জাপানি অনেক মানুষ মারা যান। এটা দুঃখজনক। আমরা তখন থেকেই চেষ্টা করছি, যেন আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে , যোগ করেন শেক হাসিনা।সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৮ মে জাপান দিয়ে ত্রিদেশীয় এই সফর শুরু করেন শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড যান তিনি। সফরে তৃতীয় ও শেষ দেশ ফিনল্যান্ড থেকে শনিবার (৮ জুন) সকালে দেশে পৌঁছান তিনি।ত্রিদেশীয় এই সফরের শুরুতেই জাপানের টোকিওতে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে আড়াইশ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি সই হয় তার সফরে।জাপান সফর শেষে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ৩০ মে শেখ হাসিনা সৌদি আরবে যান। সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর পবিত্র ওমরাহ পালন করেন তিনি, জিয়ারত করেন মহানবীর (স.)-এর রওজা।

সৌদি আরব থেকে গত ৩ জুন ফিনল্যান্ড যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ৪ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরদিন ৫ জুন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ ও ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ তার সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানেও যোগ দেন।