রাত সাড়ে ৮টা। রান্নাঘরে চলছে রাতের খাবার তৈরির প্রস্তুতি। গৃহিণী ব্যস্ত রান্না নিয়ে। মায়ের পাশে খেলা করছে শিশু নাবিহা (৫)। এ সময় হঠাৎ রান্না ঘরে চলে এলো এক বেওয়ারিশ পাগলা কুকুর। এসেই কামড় বসালো নাবিহার কোমল হাতে। হাটহাজারী উপজেলার মেখলের সানাউল্লাহ খন্দকার বাড়ি প্রকাশ ছিদ্দিক সওদাগর বাড়ির ঘটনা এটি। নাবিহা ওই বাড়ির মো. বেলালের মেয়ে।

নাবিহার আর্তচিৎকার শুনে এগিয়ে এল চাচাতো ভাই আমজাদ হোসেন রিপন (১৫)। নাবিহাকে রক্ষা করা তো দূরে থাকুক পাগলা কুকুর উল্টো কামড় বসালো রিপনের ডান পায়ে। শুধু ওই বাড়িতেই নয়, পাগলা কুকুরের কামড়ে হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে নারী-শিশুসহ ১৪-১৫ জন।

শনিবার (৮ জুন) দিনে ও দিবারাতে পৌরসভার এলাকার পূর্ব দেওয়ান নগর, আজিম পাড়া, মেখল এবং গড়দুয়ারা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাগলা কুকুরের এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতের মধ্যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন পৌরসভার পূর্ব দেওয়াননগর এলাকার নার্গিস (২৫) ও তার মেয়ে রাজিয়া (৮), আজিমপাড়া এলাকার রহিমা বেগম (৪০), মেখল ইউনিয়নের কাউছার (১১), ফাহিমা (১০) ও গড়দুয়ারা ইউনিয়নের তাসফিক উদ্দিন (২)।

ঘটনার দিন স্থানীয় লোকজন আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে রাতে ও দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে গুরুতর আহত ৩/৪জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক রাশেদুল ইসলাম।

জানা গেছে, হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে কোনো অভিযান এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। ফলে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেওয়ারিশ এসব কুকুরের একটি বড় অংশ ‘পাগলা কুকুর’-এ পরিণত হয়েছে। জলাতঙ্ক রোগের জীবাণুবাহী এসব কুকুর যখন-তখন মানুষ ও গবাদি পশুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কুকুরের হাত থেকে এলাকাবাসীর নিরাপত্তার জন্য পৌর ও উপজেলা কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যক্রমের দেখা মিলেনি।

এদিকে, পাগলা কুকুরের কামড় খেয়ে অসচ্ছল পরিবারের অনেকেই জলাতংক রোগের আতংকে ভুগছেন ভূক্তভোগীরা। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই জলাতংক রোগের কোনো ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক)। ফলে পাগলা কুকুরে কামড়ানো রোগী নিয়ে বিপাকে ভূক্তভোগীরা। তবে কুকুরের কামড় খেয়ে অসচ্ছল পরিবারগুলো স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাদেরকে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া পরামর্শ দিচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। অথচ অর্থের অভাবে অনেকেই চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে যেতে পারছে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক এক ভূক্তভোগী।

অন্যদিকে এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্থানীয় বাজারে ওষুধ ব্যবসায়ী ভ্যাকসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে তিন থেকে চার গুণ। ৩শ থেকে ৪’শ টাকার ভ্যাকসিন বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ফলে অসচ্ছল মানুষ এই ভ্যাকসিন কিনতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিদেশি এসব ভ্যাকসিন তো আর সব সময় চলে না। তাই একটু চড়া দাম না নিলে পুষবে কি করে!
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কখনও জলাতংক রোগের ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) ছিল না। গত ৮ জুন (শনিবার) দিনে ও দিবারাতে কুকুরের কামড়ে আহত ৮জনকে স্থানীয় লোকজন আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।