খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরডিপি) একজন প্রতিনিধিকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাত বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ এবং তা কমিয়ে আনার বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (১১ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এসএম মনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল এবং রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, রুপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সভায় বেসরকারি দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও ডাকা হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ ও করণীয় বিষয়ে পর্যালোচনা করতে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরডিপি বিভাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, রুপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ডাকা হয়েছিল। এর বাইরেও বেসরকারি দুটি ব্যাংকের এমডিকেও ডাকা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, গত তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর সভায় উপস্থিত ব্যাংকের এমডিদের তিরস্কার করেন। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য তাদের তাগাদা দেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না।

তার এই ঘোষণার পর তিন মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে রেকর্ড ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

সোমবার (১০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবের খাতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে নীট ৪০ হাজার ১০১ কোটি টাকা। এ ঋণ যোগ করলে দেশে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।