যেসব শিশুরা অসুস্থ রয়েছে তারা চলমান ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে ক্যাপসুল খাবে না। সেসব শিশু সুস্থ হওয়ার পর খাবে। শুধুমাত্র তাদের জন্য আগামী ১০ দিন এ প্রক্রিয়া চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

শনিবার (২২ জুন)ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্বোধন শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, স্কুলবাস ট্রেন, লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন জনসমাগম স্থলে মোট ১ লাখ ৪০ হাজার টিকাকেন্দ্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। শিশুদের অবশ্যই ভরা পেটে এই টিকা খাওয়াতে হবে এবং অসুস্থ অবস্থায় খাওয়ানো যাবে না। অসুস্থ অবস্থায় খাওয়ালে শরীরের অন্যান্য প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তাই তাদের জন্য আগামী ১০ দিন টিকা খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সেটা শুধুমাত্র অসুস্থ শিশুদের জন্য। সুস্থ শিশুর অবশ্যই আজকের ভেতরে টিকা খাওয়া সম্পন্ন করবে। এজন্য আমাদের ২ লাখ ৮০ হাজার কর্মী সারাদেশে নিয়োজিত রয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে বা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনদিন ধরে এই টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রম চলবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ক্যাপসুল সংকটের কারণে যে সমস্যা ছিলো বা তিনটি বিভাগ ও ছয়টি সিটি করপোরেশনে যেভাবে শুধুমাত্র নীল রঙের টিকা খাওয়ানোর কথা ছিলো সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুততম সময়ে আগামী ছয়মাসের জন্য বরাদ্দ ক্যাপসুলগুলো নিয়ে এখন নিয়মমাফিক লাল ও নীল রঙের টিকা খাওয়ানো হচ্ছে। ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সী ২৫ লাখ শিশুকে ১ লাখ ইউনিটে নীল ক্যাপসুল এবং ৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ২ লাখ ইউনিটে শিশুকে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

এবারের ক্যাপসুল একাধিকবার ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের ক্যাপসুলের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। দেশে-বিদেশে একাধিকবার এসব ক্যাপসুল পরীক্ষা করা হয়েছে। মানুষের জনসচেতনতা বাড়ার কারণে বর্তমানে রাতকানা রোগ একেবারেই কমে গেছে। যখন এই ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন রাতকানা রোগের হার ছিলো ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশবাসীর উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শিশুকে ক্যাপসুল খাওয়ানোর পাশাপাশি ৬ মাস বয়স পর্যন্ত অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন এবং ৬ মাস পর থেকে সুষম খাদ্য খাওয়াবেন। সুষম খাবারের অভাবে অনেক শিশুর মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া বর্ষাকাল এসেছে। বাংলাদেশ পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সংখ্যক শিশু মারা যায়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

পরিশেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে তাই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসছে। এজন্য আমাদেরকে স্বাস্থ্য বাজেট আরও বেশি বাড়াতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য বাজেট বাড়েনি। অথচ স্বাস্থ্যের বাজেট বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়ানো সম্ভব।

এর আগে বেলুন উড়িয়ে ও শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর মাধ্যমে এ ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করা হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পারভীন আক্তার, জাতীয় অধ্যাপক ডা. সাহেলা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পুষ্টিসেবা বিভাগের লাইন ডিরেক্টর এস এম মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।