বিশ্বকাপ ক্রিকেট এখন মাঝবৃত্ত পেরিয়ে গেছে। ৯টি করে ম্যাচের বেশিরভাগই খেলে ফেলেছে দলগুলো; কিন্তু এখনো সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি কোনো দলেরই। সম্ভাবনার তালিকায় গোটা ছয়েক দেশ। এক-দুই দিনের মধ্যেই চিত্রটা পরিস্কার হয়ে যাবে।

দলীয় লড়াইয়ের পাশাপাশি খেলাধুলায় ব্যক্তিগত লড়াইও থাকে। মাঠে চলে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। ক্রিকেট ম্যাচ রেকর্ডময় হওয়ায় এখানে ব্যক্তিগত লড়াইটা হয় জমজমাট।

রেকর্ড হয় ভাঙার জন্যই; কিন্তু কিছু রেকর্ড অক্ষুণ্ন থাকে দীর্ঘদিন। এই যেমন, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ১৬ বছর আগে করা ভারতের শচীন টেন্ডুলকারের সর্বাধিক রান সংগ্রহের রেকর্ডটি এখনো অক্ষুন্ন।

২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকার ১১ ম্যাচে করেছিলেন ৬৭৩ রান। এরপর তিনটি বিশ্বকাপ কেটে গেলেও শচীনের এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক রানের রেকর্ডটি ভাঙ্গতে পারেননি কেউ।২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন ভেঙ্গেছিলেন ১৯৯৬ সালে তারই করা ৫২৩ রানের রেকর্ড। ১৯৯৬ সালে তিনি ভেঙ্গেছিলেন ১৯৮৮ সালে করা ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচের ৪৭১ রানের রেকর্ড। রেকর্ডের পাতা থেকে শচীন টেন্ডুলকারকে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেই মুছে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন; কিন্তু তার দৌড় থেমেছিল শচীনের চেয়ে মাত্র ১৪ রান দুরে থেকে। ১১ ম্যাচে (১০ ইনিংস) ৬৫৯ রান করেছিলেন এই অসি ব্যাটসম্যান।

চলতি বিশ্বকাপে শচীনের এ অনন্য রেকর্ড কী ভাঙতে পারবেন কেউ? অর্ধেকের বেশি ম্যাচ শেষ হওয়ার পর এমন কৌতুহল ক্রিকেটপ্রেমীদের। আর ভাঙলেও, কে হবেন সেই কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান?

শেষ পর্যন্ত শচীনের রেকর্ড আরো আয়ু পাবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে শচীনকে টপকানোর লড়াইটা বেশ ভালোই জমেছে এবারের বিশ্বকাপে। সে লড়াইয়ের সামনের সারিতেই রয়েছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। তার সামনে আছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার এবং পেছনে ইংল্যান্ডের জো রুট, অস্ট্রেলিয়ার অ্যারোন ফিঞ্চ এবং ভারতের রোহিত শর্মা।

ডেভিড ওয়ার্নার করেছেন ৬ ম্যাচে ৪৪৭ রান, সাকিব আল হাসান ৫ ম্যাচে ৪২৫। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে হয়তো সাকিবই থাকতেন সবার ওপরে। বেশি রান সংগ্রহের তালিকায় সাকিবের পরে থাকা ইংল্যান্ডের জো রুটের রান ৬ ম্যাচে ৪২৫, অস্ট্রেলিয়ার ফিঞ্চের ৬ ম্যাচে ৩৯৬ এবং রোহিত শর্মার ৪ ম্যাচে ৩১৯ রান।

শীর্ষে থাকা ওয়ার্নার এবং চার নম্বরে থাকা ফিঞ্চের খেলা বাকি ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। সাকিব আল হাসানের আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, জো রুটের ম্যাচ বাকি অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

ওয়ার্নার-সাকিব শীর্ষ দুইয়ে থাকলেও এ মুহুর্তে ৫ নম্বরে থাকা ভারতের রোহিত শর্মার সুযোগ বরং বেশিই অন্যদের চেয়ে। কারণ, রোহিতদের এখনো ম্যাচ বাকি ৫ টি- আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার বিপক্ষে।ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বড় আপদ বৃষ্টি। বাকি ম্যাচগুলোর কয়টি অনুষ্ঠি হতে পারবে আর কয়টি বৃষ্টি ভাসিয়ে নেবে কেউ বলতে পারবে না। যে কারণে, শচীনের রেকর্ড ভাঙ্গার পণ করলেও তা সম্ভব নাও হতে পারে।

যে পাঁচজন বেশি রান সংগ্রহে শীর্ষে আছেন তাদের মধ্যে সাকিব ও রোহিতের একটি করে ম্যাচ ভেস্তে গেছে। তাই শচীনের চেয়ে ২২৬ রানে পেছনে থাকা ওয়ার্নার এবং ২৪৮ রান পেছনে থাকা সাকিব কিংবা ৩৫৪ রান পেছনে থাকা রোহিত নতুন রেকর্ড গড়তে পারবেন তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না।

আবার খেলা হলেই যে তারা প্রতি ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে পারবেন তারও তো নিশ্চয়তা নেই। ৬৭৩ রান টপকাতে না পারলে শচীন আরেকটি বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিশ্চিন্তেই ঘুমাতে পারবেন।