পুলিশের আলোচিত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা আজ মঙ্গলবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু আমাদের সময়কে এ তথ্য জানিয়েছেন। বিতকির্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা এতোদিন পুলিশ সদর দপ্তরে দপ্তরবিহীন অবস্থায় সংযুক্ত ছিলেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহ শুরুর আগে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান রেখে আরেক নারীকে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ ওঠে। এরপর সেই নারীকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় হয়। এরপর এক সংবাদ পাঠিকাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সে সময় ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমানকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আসে। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের দায়িত্বভার পান দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।

কিন্তু অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তির অনুসন্ধানে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে দুদকের খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদাণের একটি অডিও রেকর্ড সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতোগুলো টাকা ঘুষ নিয়ে উল্টো নিজের বিরুদ্ধে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের খবরে দুদক কর্মকর্তা বাছিরের ওপর চটেন পুলিশের এই বিতর্কিত কর্মকর্তা।

এই মধ্যে সোমবার প্রথমবারের মতো নিজস্ব কার্যালয়ে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। কমিশন গঠনের পর দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির প্রথম আসামি পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমান। এতে মিজানুর রহমান ছাড়াও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, মিজানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগ্নে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়েছে। যাদের নামে মিজানের অঢেল সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধানী দল।

দুদক বলছে, মামলা দায়েরের পর ডিআইজি মিজান ও তার স্ত্রী দুদকের গোয়েন্দা দলের নজরদারিতে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে খুব শিগগির তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের উৎস বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দুদকের এক পরিচালককে ৪০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। এ অবস্থায় মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এর আগেত গত ১২ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার (ডিআইজি মিজান) বিরুদ্ধে দুদক পরিচালককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি দণ্ডিত হবেন।’ তখন মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগের (নারী নির্যাতন) অভিযোগে তার বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিভাগীয় বিচার চলছে। অন্যসব অভিযোগের ব্যাপারে দুদক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এখন সে (মিজানুর রহমান) ঘুষ দিয়েছে কেন, নিশ্চয়ই আরও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আমরা সেগুলি দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দুইটাই অপরাধ, কাজেই সেই অপরাধে সে অবশ্যই দণ্ডিত হবে।’

মন্ত্রণালয় বলছে, ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিজানুর রহমানকে বিভাগীয় ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তার চাকরিচ্যুতি চেয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) সুপারিশ করা হবে।