একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবারের স্বজনরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রণদা প্রসাদসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে একমাত্র আসামি মাহবুবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

রায়ের পর রণদা প্রসাদ সাহার নাতি রাজীব প্রসাদ সাহা আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম-নির্যাতনের অংশ হিসেবে রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর রায় হওয়ায় আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি। আশা করি, শিগগির রায় কার্যকর করা হবে।’

একইভাবে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রণদা প্রসাদ সাহার সঙ্গে নিহত ভবানী প্রসাদ সাহার স্ত্রী শ্রীমতী সাহা। তিনি বলেন, ‘৪৮ বছর ধরে প্রতিটি রাত এ রায়ের প্রতীক্ষায় ছিলাম।’ আজ সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ২৩৫ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত রূপ পড়া শুরু করেন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনাল মামলার একমাত্র আসামি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেকটিতেই তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

২০১৮ সালের ২৮ মার্চ মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালান। অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে সবাইকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তাঁদের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও এর আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন। রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদীখানে। সে বাড়ি থেকেই তাঁকে, তাঁর ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যান আসামি মাহবুবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা।

আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আবদুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুর রাহমান ও তাঁর ভাই আবদুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন। আসামি একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি নির্দলীয়ভাবে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।