ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন আগামী ১০ জুলাই ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার (৩০ জুন) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন অভিযুক্ত মোয়াজ্জেম হোসেনের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ আদালতে দুটি আবেদন করেন। একটি হলো, এজলাসের পাশে আসামির সঙ্গে আইনজীবীদের আইনগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি। অপরটি মামলার আরজিতে দাখিল করা ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভের কপির জন্য আবেদন।

এ বিষয়ে আইনজীবী ফারুক আহমেদ শুনানিতে বলেন, বাদী বা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি পেনড্রাইভটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এটি একটি সেনসেটিভ মামলা। এ মামলায় তাকে কিভাবে জড়ানো হয়েছে? তার বিরুদ্ধে কিসের অভিযোগ? কেন এ মামলা করা হয়েছে? এগুলো আমাদের জানতে হবে। তাই আমাদের অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিন। আমরা সকালে আদালতের হাজতখানায় গেছি তার সঙ্গে দেখা করতে। পুলিশ আমাদের বলেছে এটা সেনসেটিভ মামলা, দেখা করার সুযোগ নাই। এ সময় বিচারক বলেন, আপনি তো জেলখানায় গিয়েও কথা বলতে পারেন। এখানে কথা বলার সুযোগ নাই।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ওনারা পেনড্রাইভ চাচ্ছেন। এটা তো সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে গেছে। ওইখানেও দেখতে পারেন। ওনারা যদি পেনড্রাইভটি দেখতে চান তাহলে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থিতিতে দেখতে পারেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জব্দ করা আলামতের কপি আসামি পক্ষকে সার্টিফাইড কপি আকারে দিতে হবে এটা আইনে বলা নাই।

রাষ্ট্রপক্ষ আরও বলেন, অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি করা হোক। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামির সঙ্গে আইনজীবীদের আইনগত বিষয় নিয়ে আলোচনা আবেদনটি নামঞ্জুর করেন। আরজিতে দাখিল করা ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভের কপির জন্য আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন আগামী ১০ জুলাই ধার্য করেন আদালত।

এদিকে রবিবার দুপুর ২টা ৪ মিনিটে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতের হাজতখানা থেকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে উঠানো হয়। এরপর ২ টা ১৭ মিনিটে শুনানি শুরু হয় যা শেষ হয় ২টা ৪৭ মিনিটে। ৪৩ মিনিট আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। শুনানি শেষে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে সকালে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। গত ১৭ জুন, বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ১৬ জুন দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানার পুলিশ।

গত ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলার ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর বিচারক মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ নুসরাত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান।