হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে গেছে। তাদের নেতৃত্ব পর্যায়ে ধারাবাহিক সব নেতাই হয়তো কোনো না কোনো অভিযানে নিহত হয়েছেন, নয়তো গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। এ পর্যায়ে সবার সমর্থিত বা মনোনীত অবিভক্ত কোনো নেতা নেই। ছোট ছোট গ্র“পে বিভক্ত হয়ে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

তবে তাদের প্রচেষ্টা থাকলেও বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। এ পর্যায়ে জঙ্গি হামলার ঝুঁকির মাত্রা খুব বেশি না হলেও, সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সবাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকলে জঙ্গিরা কখনোই সফল হবে না।

রোববার (৩০ জুন) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যে কোনো আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক বা জাতিগত ঘটনার প্রভাব পড়ে জঙ্গিদের উপর। নিউজিল্যান্ডে হামলার পর বাংলাদেশে ঝিমিয়ে পড়া জঙ্গিদের ভেতরে একটা আলোড়ন দেখেছি। এরপর পরই শ্রীলঙ্কায় হামলাও তাদের বড় অনুপ্রেরণা ছিল। তাদের ইনটেনশন থাকলেও ক্যাপাসিটি বিপর্যস্ত করে দেওয়ায় তারা কোনো ধরনের নাশকতায় সক্ষম হয়নি।

জঙ্গিবাদ একটি মতবাদ। জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও জঙ্গিবাদ এখনো আমাদের সমাজে বিদ্যমান। তাই তারা অনুকূল পরিবেশ পেলে ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে তাদের সক্ষমতার উপর। হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আমরা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দুর্বল করে দিতে সক্ষম হয়েছি। তাই অতীতেও তাদের কোনো অপতৎপরতা সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও তারা সক্ষম হবে না।

ঝুঁকির মাত্রা খুব বেশি না থাকলেও আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সচেতন থাকলে জঙ্গিরা কখনোই সফল হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।সম্প্রতি গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালনোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইএস এ হামলা চালিয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। যদি তর্কের খাতিরে এটাকে জঙ্গি হামলা হিসেবে ধরেও নেই, তাহলে তাদের সক্ষমতা কোনো পর্যায়েই নেই বিষয়টি পরিষ্কার। যেহেতু বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন তাই এ হামলাকে জঙ্গি হামলা বলার সময় আসেনি।

উপমহাদেশীয় অঞ্চলে আইএস তাদের অধ্যুষিত এলাকা ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশের কোনো জঙ্গির এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইএস হিন্দ নামে তাদের যে প্রভিন্স ঘোষণা করেছে এটা কাশ্মীরকেন্দ্রিক। এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাঠামো ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব পর্যায়ের প্রায় সবাই হয়তো কোনো অভিযানে নিহত হয়েছেন নয়তো গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন।এ পর্যায়ে তাদের সবার মনোনীত কোনো নেতা নেই। ছোট-ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম চালনোর চেষ্টা করছে। লোন ওলফ না হলেও ওই জাতীয় ভিন্ন ভিন্ন গ্র“পে বিভক্ত হয়ে সক্রিয় রয়েছেন, এক্ষেত্রে তাদের সুনির্দিষ্ট নেতৃত্ব নেই।

হলি আর্টিজান হামলার তিনবছর পূর্তিতে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ তদন্ত শেষে আমরা ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিলাম। হামলায় জড়িত বাকি ১৩ জন বিভিন্ন সময় অভিযানে নিহত হয়েছেন। অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে দুই জন পলাতক ছিলেন, যারা পরবর্তীতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এখন সবাই জেলে রয়েছেন।আমরা বলেছিলাম, তদন্তে আরো কারো নাম বেরিয়ে এলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেবো। কিন্তু পরবর্তীতে বাকি দুইজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি আমরা। কারো বক্তব্যে অভিযোগপত্রে সংযুক্ত করার মতো এখনো নতুন কারো নাম আসেনি, নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ৮ জনের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া চলমান।হলি আর্টিজান হামলায় গোয়েন্দা ব্যর্থ্যতা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যর্থতা ওই অর্থে বলা ঠিক হবে না। আমাদের কাছে কিছু তথ্য ছিল তবে তা সুনির্দিষ্ট ছিল না। দূতাবাস এলাকায় একটা হামলা হতে পারে বলে ভাসা ভাসা তথ্য ছিল। সেজন্য আমরা নিরাপত্তাও জোরদার করেছিলাম। আমরা যেভাবে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করি সেটাকে একটা প্রসেস করে একটা অ্যাসেসমেন্ট দাঁড় করাই। আবার কখনো কখনো জঙ্গিদের যোগাযোগে নজরদারি বাড়ানো হয়। নিরাপত্তা জোরদার করেছিলাম, চেকপোস্ট ছিল।

তবে এই আদর্শের লোকদের ইনটেন্ট ও ক্যাপাবিলিটি বেশি থাকলে এ ধরনের হামলা হলে প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আসলে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় হামলাটি ঘটেছে। এটাকে ইন্টেলিজেন্স ফেইলর বলা যাবে না। ওই ঘটনার পর সারাদেশে সমালোচনা হয়েছে। জঙ্গিবাদবিরোধী ঘৃণা জন্মেছে। এরমধ্যেও শোলাকিয়ায় হামলা চালনো হয়েছে।