সাতক্ষীরায় সন্ত্রাসীদের ধারালো দায়ের কোপে আহত ভ্যানচালক কিশোর শাহিন মোড়লের (১৪) চিকিৎসার দায়িত্বভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন। শাহিনের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, শাহিনের মাথায় ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। গতকাল রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।

নাসির উদ্দিন জানান, হাসপাতালের পক্ষ থেকেই শাহিনের চিকিৎসার জন্য যাবতীয় সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে নিউরোসার্জারির বিভাগীয় প্রধানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শাহিনের চিকিৎসা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন গতকাল শনিবার রাতে ঢামেক হাসপাতালে শাহিনের সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহিনের চিকিৎসার দায়িত্বভার নিয়েছেন।

এদিকে যাত্রীসেজে কিশোর শাহিনকে কুপিয়ে আহত করে তার ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।পুলিশ বলছে, সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা গ্রেপ্তার হবে।

এ ঘটনায় পাটকেলঘাটা থানায় শাহিনের বাবা হায়দার আলী অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।গত শুক্রবার এ ঘটনার পর আহত শাহিনকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শাহিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহিনের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন।শাহিন গোলাঘাটা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মাদ্রাসার ছুটির দিনে ভ্যান চালায় সে। শাহিন সাতক্ষীরার পাশের জেলা যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বিদ্যানন্দকাটি গ্রামের হায়দার মোড়লের ছেলে। তার আরো দুই বোন রয়েছে।

মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জহির রায়হান বলেন, ওরা খুব গরিব মানুষ। ওরা দিনে এনে দিনে খায়। শাহিনের বাবা ঋণ করে ভ্যানটি কিনেছিলেন।

শাহিনের খালু রবিউল বাশার জানান, গত শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বিকেলে কয়েকজন যাত্রী ভাড়ায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে শাহিনকে ডেকে নেয়। কিশোর শাহিন তাদের ডাকে সায় দিয়ে ভ্যান নিয়ে বের হয়। পথে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন কৃষ্ণনগর জামতলায় পৌঁছালে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা পেছন দিক থেকে তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তার ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা শাহিনকে উদ্ধার করে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশের সহায়তায় শাহিনকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গতকাল বিকেলে শাহিনকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রাতেই তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়।

রবিউল বাশার আরো জানান, আশা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ভ্যান কিনেছিলেন শাহিনের বাবা। শাহিন ছুটির দিনে ভ্যান চালিয়ে আয় করা টাকা তুলে দেয় বাবা-মায়ের হাতে। তার বাবা হায়দার আলীও একজন ভ্যানচালক। চার কাঠা জমির ওপর বাড়ি তাদের। কোনোমতে তাদের সংসার চলে।

শাহিনের প্রতিবেশী মনসুর রহমান জানান, শাহিন এখন আইসিইউতে রয়েছে। তার চেতনা ফেরেনি।
এদিকে, শাহিনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তার মা খাদিজা বেগম।