দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েস শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআইজি মিজানুর রহমানকে ব্যাপক পুলিশ প্রহরায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়।এজলাসের পেছনের একটি কক্ষে তাকে বসতে দেওয়া হয়।আসামিপক্ষে আইনজীবী এহসানুল হকসহ আরও অনেকে জামিনের শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল ও জাহাঙ্গীর আলম জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালতে শুনানি শুরু হয় বেলা ১১টা ৩১ মিনিট, আর শেষ হয় ১২টা ৩৪ মিনিটে। শুনানির এই একঘণ্টা আদালতের ডকে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিআইজি মিজান। শুনানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।শুনানির শুরুতে আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতকে বলেন, ওকালতনামায় (আইনজীবী নিয়োগের ফরম) আসামির স্বাক্ষর করানোর জন্য আদালতের অনুমতি চাচ্ছি।

তখন বিচারক বলেন, এখানে স্বাক্ষর করার সুযোগ নাই। আপনারা কারাগার থেকে আসামির ওকালতনামায় (আইনজীবী নিয়োগের ফরম) স্বাক্ষর করে নিয়ে আসালে জামিন শুনানি করতে পারবেন।

আসামির আইনজীবী সমাজী বলেন, গতকাল (সোমবার) আসামিকে হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছিল। ওখানে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করানোর সুযোগ ছিল না। দয়া করে আপনি অনুমতি দিলে এবং আসামি স্বাক্ষর করলে আমরা জামিন শুনানি করবো।এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশারফ কাজলও অনুমতি দেওয়া যেতে পারে’ বলে আদালতকে জানান। তখন বিচারক অনুমতি দিলে আসামি ডিআইজি মিজান আদালতের ডকে দাঁড়িয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন।

এরপরই জামিনের জন্য শুনানি শুরু করেন ডিআইজির নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। শুনানিতে তিনি বলেন, দুদকের দায়ের করা এই মামলাটি স্পেশাল একটি মামলা। এই আইনে আসামি জামিন পাওয়ার হকদার। তার বিরুদ্ধে এজাহারে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনও ডকুমেন্টস আপনার (বিচারক) কাছে নেই। দুদকও এরকম কোনও কিছু আদালতে দাখিল করেনি। ডকুমেন্ট ছাড়া আপনি কীভাবে বুঝবেন আসামির এ সম্পদ অবৈধ? কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন?

তিনি আরও বলেন, আসামি বয়স্ক ও অসুস্থ। যদিও আমাদের কাছে এখন কোনও অসুস্থতার সার্টিফিকেট নেই। এ বয়সে মানুষ তো অসুস্থ থাকে। আসামি দীর্ঘদিন রাষ্ট্রের উচ্চপদে কর্মরত থেকে অনেক কাজ করেছেন। দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের নির্মূলে তার অনেক অবদান রয়েছে। আসামি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে যেকোনও শর্তে তার জামিন চাচ্ছি।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, এজাহারে আসামির বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির যে অভিযোগ আছে, দুদকের আইনে ও মানি লন্ডারিংয়ের আইনে তিনি জামিন পান না। যদিও এটি স্পেশাল মামলা, তারপরও আইনের বিধান অনুযায়ী এই আসামি জামিন পান না।

এরপর বিচারক আসামির আইনজীবীকে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলের শুনানির ওপর কাউন্টার শুনানি করতে বলেন।তখন আসামির আইনজীবী এহসানুল সমাজী বলেন, স্যার, এখন এ মামলার জন্য আপনি স্পেশাল কোর্ট। সেহেতু আমার এই মামলাটি স্পেশাল আইনের মামলা। তাই স্পেশাল আইন অনুযায়ী, আমার আসামি জামিন পাওয়ার হকদার।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে ডিআইজি মিজানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি আজিমুল হকের গাড়িতে করে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশি পাহারায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় থানার ওসি আবুল হাসানের কক্ষে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন।প্রসঙ্গত, এর আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু, এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ১৯ জুন আদালত এক আদেশে মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২৪ জুন তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।