১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধী দলী নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ট্রেনবহরে হামলা, গুলিবর্ষণ, বোমবাজি মামলার রায়ে ৯ জনের মৃত্যুদন্ড, ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও আর্থিক দন্ড দিয়েছে আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক রুস্তম আলী এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদীর পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সামছুল আলম, জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এম আক্তারুজ্জামান, মাহবুবুর রহমান, রেজাউল করিম শাহিন, অঅজিজুর রহমান শাহিন, শহিদুল ইসলাম অটল, জাকারিয়া পিন্টু,মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল।

যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তরা হলেন, আমিনুল ইসলাম, খোকন, ইসমাইল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামুয়া, শেখন, আক্কেল, রবি, এনাম, আবুল কাশেম, কালঅ বাবু, মামুন, সেলিম, কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম, রিপন, লাইজু, জব্বার, পলাশ, হাকিমুদ্দিন টেনু, আলমগীর, ফিরোজুল ইসলাম। আরো ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

১০ বছরের সাজা প্রাপ্তরা হলেন, নেফাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন জনি, রনো, বরকত, এনামুল কবির, মুক্তার, আজিজুর রহমান, হুমায়ন কবির দুলাল, জামিরুল, তুহিন, বজলুর রহমান। এদের আরো ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে রেলপথে খুলনা হতে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। পথে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ট্রেনটি প্রবেশের মূহুর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও হামলা চালানো হয়। স্টেশনে ট্রেনবহর যাত্রাবিরতি করলে আবারও হামলা হয়। এসময় দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন।

এ ঘটনার পর ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তিন বছর পর ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল ঈশ্বরদীর শীর্ষস্থানীয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মকলেছুর রহমান বাবলু, জেলা বিএনপি নেতা এম আক্তারুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সামছুল আলম, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, যুবদল নেতা জাকারিয়া পিন্টু, পাকশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ মোট ৫২ জনের নামে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। গত ২৫ বছরে এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামীদের মধ্যে ওসিয়া, আলী আজগর, খোকন, তুহিন ও আলমগীর হোসেন নামের ৫ আসামি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান মুক্তা, অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন, কাজি সাজ্জাদ ইকবাল লিটন এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নুরল ইসলাম গ্যাদা, অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার। এদিকে রায়ে উচ্চতর আদালতে আপিল করবেন আসামি পক্ষের আইনজীবিরা জানিয়েছেন।