কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সাথে সাথে হাটহাজারী উপজেলার ১১ মাইল এলাকায় অবস্থিত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেয়া হয়েছে পাশের মরা ছরায়। যা পানির ¯্রােতের সাথে মিশে পতিত হয়েছে বিশ্বের একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে। তবে পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ বলছে কোন বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল তারা ছাড়েনি। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল তথা প্লান্টটি পরিদর্শন করেছেন।

সোমবার (৮ জুলাই) ভোর রাতে উক্ত পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়ার হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন। এভাবে হালদায় বর্জ্য ও পোড়া তেল ছাড়ার ফলে হালদার পরিবেশ ও নদীর জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান হালদা বিশেষজ্ঞরা।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরয়া বলেন, পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলার পরও কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযোগটি এদের বিরুদ্ধে নতুন কিছু না। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত হলে তারা তাদের প্ল্যান্টের বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেয়। যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে প্রথমে পাশের মরা ছরা এরপর উপনদী হয়ে হালদায় পতিত হয়ে নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল বৃষ্টি হলেই পার্শ্ববর্তী ছরায় ছেড়ে দেয়। এটি তাদের একটি পুরানো অভ্যাস। তাছাড়া তাদের বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। তাই, যখনই ভারী বৃষ্টিপাত হয় তখন তারা এই পদার্থগুলি ছেড়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ভোর রাতে উক্ত পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ছেড়ে দেওয়া বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল বৃষ্টির পানির সাথে মিশে পার্শ্ববর্তী মরা ছরা হয়ে ইতোমধ্যে হালদায় নদীতে পতিত হয়েছে। রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হালদায় পোড়া ফার্নেস ওয়েল ছেড়ে দিলে ইউএনও একা ঠেকাতে পারবে না। তাই আমি বলব, ইটিপি বাস্তবায়ন করে হালদার প্রতি দরদি হতে হবে। এরকম নির্বিকার হবার সুযোগ নাই। আমি বিদ্যুৎ ও হালদা দুইটাই চাই। তাই এ বিষয়ে স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আমি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি।

তবে বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকে জানান, আসলে ফার্নেস অয়েল আনলোডিং এর সময় কিছু অয়েল প্ল্যান্টের বাইরে পড়ে। এসব তেল হয়তো বৃষ্টির পানির সাথে মিশে মরা ছরায় পড়তে পারে। এ সময় দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পরও প্ল্যাটিতে কেন এখনও পর্যন্ত ইটিপি স্থাপন করা হয়নি কেন জানতে চাইলে ওই ব্যবস্থাপক জানান, আমরা বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছি।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মাঈদুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, প্ল্যান্টির পাশের ছরায় বর্জ্য ও পোড়া ফার্নেস অয়েল ছেড়ে দেওয়া প্রমাণ আমরা পেয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছি এবং প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় এর শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, ২৯ এপ্রিল ( সোমবার) বিকালে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফার্নেস অয়েলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে ৩টি ওয়াগন কালভার্ট ভেঙে ছরায় (খাল) পড়ে গিয়েছিল। ওই ৩টি ওয়াগনের প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল ছরাসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে হালদা নদীর দিকে এগুচ্ছিল। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও এরাকাাবাসীল সহযোগিতায় ওই মরা ছরায় পড়ে যাওয়া ফার্নেস অয়েলগুলো বাঁধ দিয়ে হালদা নদীতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল।