অর্থআত্মসাৎ, নিয়মবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণের প্ল্যান অনুমোদন, ফাইল আটকে মেয়র ও কাউন্সিলরের নাম ভাঙ্গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা দূর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীসহ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জনকে চাকুরি হতে অব্যহতি, ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৫ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫জনকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা শহরের নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ওইসব তথ্য জানিয়েছেন।

মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে চাকুরি হতে অব্যহতি প্রাপ্তরা হলেন- গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ডের সচিব মাহাবুব আলম, ২৪নং ওয়ার্ডের সচিব জহির আলম, ৪২নং ওয়ার্ডের সচিব মোঃ আক্তার হোসেন, ৩২নং ওয়ার্ডের সচিব মাহাবুবুর রহমান, ৩৪নং ওয়ার্ডের সচিব মোঃ নাদিম হোসেন ও ৪৯নং ওয়ার্ডের সচিব মোঃ মুক্তার হোসেন। ফাইল আটকে মেয়র ও কাউন্সিলরের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাদেরকে চাকুরি হতে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একাউন্ট ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদায় করে আত্মসাতের অভিযোগে টঙ্গী জোনের সাবেক হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, নিয়মবহির্ভূতভাবে নগরী এলাকায় বাসা ও ফ্যাক্টরির ভবন নির্মাণের প্ল্যান ব্যাক ডেটে (পেছনের তারিখ) অনুমোদন করে দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম এবং ফাইল আটকে মেয়র ও কাউন্সিলরের নাম ভাঙ্গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে গাছা জোনের লাইসেন্স কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা কামালকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে সিটি কর্পোরেশনের ৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- কর নির্ধারণ কর্মকর্তা আতাউর রসুল ভ’ইয়া, অফিস সহায়ক সোহেল, কর আদায় সহযোগী কালাম, জমি জরিপ শাখার সাইফুল ও কর নির্ধারণ সহযোগী কামরুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলণে সিটি মেয়র আরো জানান, ট্যাক্স, পানি ও বিদ্যুত শাখার অপর ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংএ মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতি মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করে বলেন, ঘুষ,দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করা হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে অনেক সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে বারবার সংশোধন হবার সুযোগ দিলেও তারা তাদের অসৎ কাজ থেকে সরে যাননি। তাই আমি সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ ও প্রশাসনিক ভাবে নিশ্চিত হয়ে দুর্নীতিবাজ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারি বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে নগরীর বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছি নগর ও নাগরিকদের কিভাবে উন্নত ও আধুনিক সেবা দেয়া যায়। আমি সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে বলেছি আপনারা নগরীর নাগরিকদের সেবা দিন। তারা যেন কোন অবস্থানেই হয়রাণির শিকার না হয়। কারণ নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের সকলের বেতন হয়। নাগরিকদের সেবা দানে যেন কেউ কোন প্রকার অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত না হন।
মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের উন্নয়নের জন্য দুইটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে প্রায় ৬ বছর আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠন করেন। এ নগরীতে ৩৮ লাখের অধিক জনসংখ্যা বাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন গার্মেন্টস ও কলকারখানায় কাজ করে। এ নগরীর মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও নগরীর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য সরকার প্রায় ৭ হাজার ৬’শ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি গাজীপুর সিটিকে গ্রীণ সিটি ও ক্লিন সিটিতে পরিনত করতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে নগরবাসীর সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতি পরায়ণ কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নগরবাসীর মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী নগরবাসীরা এজন্য তরুণ মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ধন্যবাদ জানান। তাদের মতে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে নগরবাসীকে হয়রাণী করে আসছিল। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অভিযোগ করেও নগরবাসী কোন প্রতিকার পায়নি।