১০৩ টাকায় সোনার হরিণ পেয়ে আনন্দে আতœহারা হয়ে পড়েছে ১৫১ জন নারী-পুরুষ। খুশিতে আনন্দের বন্যা বইছে পরিবারগুলোতে। ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরী পেয়েছে এ সব নারী-পুরুষ। পাবনা শহরের দীনরা বিউটি পার্লারের গার্ডের মেয়ে আজমি, দিনমজুরের মেয়ে রুমা, অটোবাইক চালকের মেয়ে মিতু, শান্তা, সিএনজি চালকের মেয়ে রোকেয়া, পিতৃহারা সুমাইয়া, রিক্সা চালকের ছেলে রোবহান, হতদরিদ্র কৃষক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার ১০৩ টাকায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকুরি পেয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতীসহ মেধাবী ১৫১ জন পুলিশের এই চাকুরি পেয়েছেন। তন্মধ্যে ১২৪ জন পুরুষ ও ২৭ জন নারী। ১৫১ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় ৪০ জন আবেদন করে ৩৮ জনেরও চাকুরি হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পাবনা জেলার অনুকুলে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে গত ৩ জুলাই প্রাথমিক বাচাই শেষে ১০৭৫ জন পরদিন ৪ জুলাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩৮৩ জন মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়। ৮ জুলাই ভাইবা পরীক্ষা শেষে মেধা তালিকা হতে ১৫১ জনকে চূড়ান্তভাবে মনোনিত করা হয়েছে।

নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম-বিপিএম, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল পিপিএম ও নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার।

পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘুষ-দূর্নীতি মুক্ত ভাবে নিরপক্ষেতা বজায় রেখে পাবনাতে পুলিশের কনস্টেবল পদে ১৫১ জনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের উদ্যোগ ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকুরি কার্যক্রম সফল ভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ সুপার বলেন, এর মাধ্যমেই সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরাণ্বিত হবে এমনটাই বিশ্বাস করছি।
এক প্রতিক্রিয়ায় ভাঙ্গুড়ার অটোবাইক চালক আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে শান্তা আক্তার মেঘলা বলেন, দেশে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকুরি নিতে হচ্ছে। আর ১০৩ টাকায় পুলিশের চাকুরি এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। আমার কাছে এটা সোনার হরিণ। পুলিশ বিভাগ তথা সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।
পাবনা শহরের দিনা বিউটি পার্লারের গার্ড জালাল উদ্দিন বলেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি আমার মেয়ে পুলিশ হবে। সে সরকারি চাকুরি করবে। মেয়েটাকে মাত্র ১০৩ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়েই চাকুরি হয়েছে, আমার খুব ভালো লাগতেছে। আমি আনন্দিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মূলাডুলির বাসিন্দা দিন মজুর আঃ রহিমের মেয়ে রুমা আক্তার, পাবনা সদর থানাধীন শিবরামপুরের বাসিন্দা পাবনা শহরের দীনা পার্লারের গার্ড জালাল উদ্দিনের মেয়ে আজমী খাতুন ও লস্করপুরের বাসিন্দা অটোবাইক চালক মোঃ আয়নাল হক এর মেয়ে মিতু পারভীন, ভাঙ্গুড়া থানা এলাকার বাসিন্দা অটোবাইক চালক মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক এর মেয়ে শান্তা আক্তার মেঘলা ও সি.এন.জি অটোরিক্সা চালক রফিকুল ইসলামের মেয়ে রোকেয়া পারভীন এবং আতাইকুলা থানাধীন বাবা হারা এতিম (টিওশানি করে জীবিকা নির্বাহ করে) সুমাইয়া আক্তারসহ হত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদেরও মেধার ভিত্তিতে ২১ জন মেয়ে পুলিশে চাকুরী পেয়েছেন।

এছাড়াও পাবনা সদর থানাধীন দিন মজুর মোঃ সাহেদ আলীর ছেলে নাজমুল হাসান, দিন মজুর সাইদুল ইসলামের ছেলে নাসিম হোসেন, সাঁথিয়া থানাধীন দিন মজুর জগদীশ চন্দ্র ঘোষের ছেলে নিতাই চন্দ্র ঘোষ, বেড়া থানাধীন দিন মজুর জহুরুল ইসলামের ছেলে শান্ত মাহমুদ, সাঁথিয়া থানাধীন রিক্সা চালক আবুল কালাম আজাদের ছেলে মিজানুর রহমান, আমিনপুর থানাধীন রিক্সা চালক হারেজ আলীর ছেলে বোরহান আলী শেখ, ভাঙ্গুড়া থানাধীন হত দরিদ্র আবুল হোসেনের ছেলে আতিকুল হোসাইন, হতদরিদ্র কৃষক সালাউদ্দিন আহম্মেদ এর ছেলে সাখাওয়াত সাজু, হতদরিদ্র কৃষকের সন্তান জাহিদ হাসান এবং হতদরিদ্র কৃষকের সন্তান আব্দুল হালিমসহ এ জেলার ১১টি থানা এলাকার বিভিন্ন পেশার ১২৪ জন (পুরুষ) সন্তান মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে মনোনিত হয়েছে।