দুধ নিয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের পক্ষে দাঁড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত সচিবের অপসারণ দাবি করেছেন।

রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিরাপদ খাদ্য চাই, ফারুক স্যারের পাশে দাঁড়াই ব্যানারে এ মানববন্ধনে অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।মানববন্ধনে ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান সহকর্মী অধ্যাপক ফারুককে নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

অধ্যাপক রহমান বলেন, জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ মনে করেই জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রফেসর আ ব ম ফারুক তার গবেষণার ফল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। সেই বিষয় নিয়ে আমাদের একজন অতিরিক্ত সচিব যে মন্তব্য করেছেন, আমরা কোনোভাবেই এই মন্তব্যকে সাধারণ মনে করি না।

আমরা মনে করি, এই অতিরিক্ত সচিবকে অপসারণ করা দরকার, তার শাস্তি হওয়া দরকার। জনস্বার্থে এই বিষয়টি নিয়ে যেখানে আরও অধিকতর গবেষণা করা কিংবা এটি খতিয়ে দেখার দরকার ছিল, সেই বিষয়টিতে উনি গুরুত্ব না দিয়ে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে, যিনি গবেষণা করেছেন, আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে তাকে অপমান করা হয়েছে।

অধ্যাপক ফারুক গত ২৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানানোর পর শুরু হয় আলোচনা।তাদের ওই গবেষণার সঙ্গে বিভাগের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান।পরে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তাদের ওই গবেষণা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। অতিরিক্ত সচিবকে পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এই গবেষণা দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক।

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও বাজার থেকে ১০টি নমুনা নিয়ে ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানান অধ্যাপক ফারুক। তার একদিন বাদেই তার পক্ষে নামল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।অধ্যাপক রহমান বলেন, আমরা দেখেছি যে বিএসটিআইর অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করার কোনো পদ্ধতি নেই। অনতিবিলম্বে বিএসটিআইর সক্ষমতা বাড়ানো হোক এবং সেখানে সৎ লোকের নিয়োগ দিয়ে বিএসটিআইর মাধ্যমে এটা উদঘাটন করা হোক।

পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুজ জাহের বলেন, যদি কোনো গবেষণা আপনি ভুল প্রমাণ করতে চান, তাহলে আরেকটা গবেষণা দিয়েই আপনাকে প্রমাণ করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, তিনি ফারুক স্যারকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শ্রদ্ধেয় বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক, তার ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে আমরা জানি, তার বিরুদ্ধে তিনি মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।যেখানে আপনার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে, সেটা আপনার জার্নালে প্রকাশ করার দরকারটা কী? সেটা আপনি তাৎক্ষণিক প্রকাশ করবেন। আগে তো মানুষ, মানুষের স্বাস্থ্য।

তিনি বলেন, এখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এমন একটি চক্র করে রাখছে, যেটার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে, তার সত্যটাও যদি প্রকাশ করেন, তাহলে ফারুক স্যারের মতো হুমকির মুখোমুখি হতে হয়।ওয়াসার পানি নিয়ে আন্দোলনকারী মিজানুর রহমান এই মানবন্ধনে সংহতি জানিয়ে বলেন, যেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধেই অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। অথচ এই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বি এম লিপি আক্তার বলেন, ফারুক স্যারের গবেষণা ছিল আমাদের মৌলিক বিষয় খাদ্য নিয়ে। কিন্তু স্যারের বিরুদ্ধেই যখন অ্যাকশন নেওয়ার কথা বলা হয়, তখন সেটা আমাদের হতাশ করে।

ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বলেন, আমাদের উচিত ছিল তাকে (অধ্যাপক ফারুক) সাধুবাদ জানিয়ে আমরা এখানে জমায়েত হব। কিন্তু তার বদলে তাকে মামলার হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক।মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান, ডাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, ডাকসুর সদস্য রাইসা নাসের, নজরুল ইসলাম, নিরাপদ খাদ্য চাই আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাচ্চু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ প্রমুখ।