দেশের ৯৩টি নদ-নদীর পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী,৬৩টি পয়েন্টে পানি সমতল বৃদ্ধি ও ২৯টি পয়েণ্টে পানি হ্রাস পেয়েছে। বন্যার ফলে পানিবন্দী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের সংকটে ভুগছেন তারা। চরাঞ্চলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সারাদিন পানিতে চলাফেরা করায় বানভাসীরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী,২৩ টি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।সুরমা-কুশিয়ারা ব্যতিত দেশের সকল নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের অনেক স্থানে অঅগামী ২৪ ঘন্টায় মাঝারী হতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।আগামী ২৪ ঘন্টায় ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী ২৪ ঘন্টায় আত্রাই নদী, বাঘাবাড়ি ও পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

আগামী ২৪ ঘন্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা,বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। লালমনিরহাট, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘন্টায় উন্নতি হতে পারে। রোববার ১৪টি নদীর ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।পানি পরিস্থিতি ১টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ১টি পয়েন্টের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ জানানো হয়েছে,গত ২৪ ঘন্টায়(সকাল ৯ টা থেকে আজ সকাল ৯ টা পর্যন্ত) বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি।

গাইবান্ধা:গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ২১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার মানুষ। তবে সবচেয়ে বিপদে আছে সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের ৬৫টি এলাকার ৮৯ হাজার মানুষ।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি ১২৮ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, বানভাসি মানুষ এখনও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ অসুস্থ স্বজন নিয়ে, কেউ গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে, কেউ বা ছোট ছোট শিশুদের কোলে নিয়ে একটু উঁচু জায়গার সন্ধান করছে। সব মিলে কাহিল হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষের জীবন।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র ও ধরলা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪ লাখ মানুষ বন্যা ও ভাঙনের সম্মুক্ষীণ হয়েছে। রৌমারীতে বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রৌমারীর কর্ত্তিমারীতে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পানিতে পরে সাইফুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়। অপরদিকে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নে রুনা বেগম (২৮), রুপা মনি (৮) ও হাসিবুল ইসলাম (৭) নৌকায় করে বন্যা দেখতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে মারা যায়। এতে সুমন (৮) ও রুকুমনি (৮) নামে আরও দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। কুড়িগ্রাম ও রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল যৌথভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এনিয়ে দুইদিনে জেলায় এক প্রতিবন্ধীসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারি পরিচালক মনজিল হক জানান, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুর এলাকায় নৌকা ডুবে একই এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রুনা বেগম, মহসিন আলীর কন্যা রুপা মনি ও আয়নাল হকের পূত্র হাসিবুল ইসলামকে মৃত: অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও মনসুর আলীর পূত্র সুমন ও রাশেদ আলীর কন্যা রুকু মনি এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তাদেরকে উদ্ধারে কাজ করছে ডুবুরীর দল।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহিনুর রহমান সরদার জানান, রুপা মনি ও হাসিবুল ইসলাম নামে দু’শিশুকে দুপুরে হাসপাতালে মৃত: অবস্থায় নিয়ে আসে। পরে তাদের পরিবারের লোকজন শিশু দুটিকে বাড়ীতে নিয়ে গেছে।

জেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত কুড়িগ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ভাঙনে ৪ হাজার ৫৩৬জন এবং পানিবন্দী ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৭২ জন।বন্যার ফলে পানিবন্দী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের সংকটে ভুগছেন তারা। চরাঞ্চলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সারাদিন পানিতে চলাফেরা করায় বানভাসীরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে গিয়ে ১২৫ সে.মিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৫ সে.মি এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ১১৭ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কমে গিয়ে ১০ সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার উলিপুর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন সাহেবের আলগার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান। এই ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার ৩৭০টি পরিবারের মধ্যে ৪ হাজার ৩শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে। ১৪টি উচুঁ জায়গায় অবস্থান নিয়েছে ১৮শ পরিবারের লোকজন। এছাড়াও নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে ৮শ পরিবার।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, এই ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষের মধ্যে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং চারদিকে পানি ওঠায় লোকজন রান্নাবান্না করতে না পেরে এক প্রকার না খেয়ে রয়েছে। এছাড়াও দিন মজুর শ্রেণির লোকেরা কর্মসংকটের কারণে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জরুরী ভিত্তিতে তাদেরকে ত্রাণ সহায়তার কথা জানালেন তিনি।উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, ঘরে ধান আছে কিন্তু ভাঙতে না পারায় খেতে পারছে না বানভাসিরা। এখানে জরুরী ভিত্তিতে শুকনো খাবার প্রয়োজন। এই ইউনিয়নের ২৪ হাজার মানুষের মধ্যে ২২ হাজার মানুষ পানিবন্দী।

রৌমারীর যাচুর চর ইউনিয়নের কর্ত্তিমারী চাকতাবাড়ী এলাকায় গত রাতে (১৫ জুলাই) ওয়াপদা বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানে কর্ত্তিমারী মাস্টারপাড়ায় বাঁধের ৭০ ফিট অংশ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পরে। এতে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যাদুরচর ডিগ্রি কলেজ, যাদুরচর মডেল কলেজ এবং এমএ হাকিম আইডয়াল মহিলা কলেজসহ ১০টি গ্রাম এখন পানির নীচে অবস্থান করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী। একই অবস্থা বিরাজ করছে পুরো জেলা জুড়ে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় নতুন করে ৩ মে.টন চাল ও ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৪৫ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্বক ভয়াবহ দেওয়ানগঞ্জের সাথে রেলযোগাযোগ বন্ধ॥ প্রায় ৩লাখ মানুষ পানি বন্দি,৩৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান বন্ধ ঘোষনা,পানিতে পড়ে ১শিশুর মৃত্যু

জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরে বন্যার পরিস্থিতি মারাত্বক ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। গত ১৬জুলাই বিকাল ৩টা পর্যন্ত যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৪৫ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়ন (বোর্ডপাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান। তারা জানান.গত ১৯৮৮সালে ১২২ সেঃমিটার এবং ২০১৭সালে ১৩৪ সেঃমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এবার তারচেয়ে আরো ১১ সেঃ মিটার বেশী উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অথাৎ গত ১০০ বৎসরের মধ্যে এই সর্বোচ্চ পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছেন।

ইসলামপুর ষ্ট্রেশন মাস্টার মো.মিজানুর রহমান জানান,দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে ষ্ট্রেশন ইয়ার্ডে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে আন্তঃনগর তিস্তা ট্রেনসহ সকল ট্রেন যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ইসলামপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করলেও ,যে কোন মুহুতে তা বন্ধ হয়ে জামালপুর সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মালমারা গ্রামের ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ(৫) বন্যার পানিতে পড়ে মারাগেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শহিদুল ইসলাম জানান, সারা জেলায় ২৯৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা, ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টানসহ প্রায় ৩৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

এদিকে জেলা ত্রান ও পুর্ণবাসন অফিস সুত্রে জানাযায়, জামালপুরের ৭টি উপজেলার ৬৮ইউনিয়নের মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়নসহ ৩টি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাক্ষাধীক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ৪৭৫টি বাড়ি সম্পুর্ণরুপে এবং ১৫৯০টি বাড়ি আংশিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে প্রায় ১০কিঃমিটার পাকা রাস্তা এবং ২০কিঃমিটার কাঁচা রাস্তা সম্পূন্নরূপে বিলিন হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা মানুষসহ গৃহপালিত পশু গরু,মহিষ, ছাগল হাঁস, মরগি পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষ গুলো উচু বাঁধে,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকেই খোলা আকাশের নীচে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইসলামপুর উপজেলার সাপধুরী,বেলগাছা,চিনাডুলী,কুলকান্দি ইউনিয়নের যমুনার দ্বীপ চরের লোকজন নৌকার অভাবে তাদের ঘরের ধান চাল এমনকি গৃহপালিত পশু নিরাপদ স্থানে নিতে পারছে না বলে বেলগাছা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানিয়েছেন। বানভাসিদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধা পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুনাবাদ,চর আমখাওয়া ইউনিয়ন,ইসলামপুর উপজেলার পার্থর্শী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ইসলামপুর পৌরসভা, গোয়ালের চর,গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। মেলান্দহ উপজেলার, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, মেলান্দহ পৌরসভা, নাংলা, আদ্রা,ফুলকোচা, ঝাউগড়া, ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, পোগলদিঘা, সাত পোয়া ও কামরাবাদ ইউনিয়ন। বকশিগঞ্জ উপজেলার সাদুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, ইউনিয়ন, জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষীরচর,তুলশিরচর ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ইসলামপুর এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রান ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো.নায়েব আলী জানান ১৫জুলাই বন্যায় দুর্গতদের জন্য ইসলামপুর ৭০ মেঃটন,দেওয়ানগঞ্জ ৭০ মেঃটন,মাদারগঞ্জ ৩০ মেঃটন এবং সরিষবাড়ী উপজেলায় ৩০ মেঃটন মোট ২০০ মেঃটন চাল সরকারী ভাবে বরাদ্ধা দেওয়া হয়েছে। এর আগে সারা জেলায় আরো ৯০ মেঃটন চাল ্এবং ৩ লাখ নগদ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান। এব্যাপারে ইসলামপুরের স্থানীয় এমপি আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল জরুরী ভিক্তিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীসহ খাদ্য ও ত্রান মন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

লামা প্রতিনিধি:গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করেছে বান্দরবানের লামা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। প্রতি পরিবারের মাঝে ১৫ কেজি হারে মোট ১ হাজার ৭০০ পরিবারের মাঝে এ চাল বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ চাল বিতরণ উদ্বোধন করেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল। এ সময় নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি, পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহেদ উদ্দিন ও মিল্কি রাণী দাশ, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। চাল বিতরণের সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার পৌরসভার ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০০ পরিবারের মাঝে ও বুধবার অন্যসব ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত ১০০০ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে।

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার বাণিজ্যিককেন্দ্র মৌখাড়া এলাকায় মেয়র আব্দুল বারেক সরদারের ব্যক্তিগত একটি পুকুরের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মৌখাড়া বাজারের মূল সড়ক, নাজিরপুর সড়কে পানি জমে আছে। এছাড়া নাজিরপুর সড়কের পাশের বাড়িগুলোর অধিকাংশের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জিয়া অভিযোগ করে বলেন, মেয়রের পুকুরের বাঁধের কারণে পানি বিলে নামতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তার ব্যক্তি স্বার্থের কারণে এলাকাবাসীর কষ্ট করতে হচ্ছে।রিপন আলী নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, বর্তমান মেয়র পৌরবাসী জন্য কিছুই করছেন না। বাজারের পশ্চিম পাশে বড়াল নদী। যদি ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি নামতে চায় না। ফলে পানি জমে নানান সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। এ অবস্থায় ওই পুকুর পাড় অপসারণ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে মেয়র আব্দুল বারেক সরদার বলেন, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বড় বড় শহরেও তো এসময় পানি জমে থাকে। পুকুরটিতো মাঠের মধ্যে, এতে কি আর শহরে পানি জমে? এটা আমার প্রতিপক্ষর লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে যেহেতু লোকজন অভিযোগ তুলেছেন, তাই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

বগুড়া: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যমুনার পানি বেড়েই চলছে। এতে যমুনাবেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার নতুন নতুন গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে। এসব উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রামের প্রায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ এখন পানিবন্দি।

বন্যায় সারিয়াকান্দি উপজেলায় দুই শতাধিক জলাশয় তলিয়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ৭৩ দশমিক ৯৭ মেট্রিকটন মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ টাকার। এছাড়া এসব উপজেলায় প্রায় ৮৬ হাজার ৩ হেক্টর জমির ফসলে ক্ষতি হয়েছে বন্যায় নিমজ্জিত হয়ে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ৬১টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, যমুনা পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়া অব্যাহত হয়েছে। আপাতত কমার কোনো লক্ষণ নেই।

তবে যমুনা নদীর ডান পাশ দিয়ে নির্মিত সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখনও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। কিন্তু পানির চাপ ক্রমেই বাড়ছে। তাই পাউবোর পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যোগ করেন পাউবোর এই কর্মকর্তা।

এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের কারণে সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলায় যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এক হাজার ৯০০টি ল্যাট্রিন ও ২ হাজার ৪৫৭টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া প্রায় ১৪৫টি বসতবাড়ি ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরো ২৪০টির মতো বসতবাড়ি। এসব বসতবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রায়হানা ইসলাম জানান, ত্রাণ অধিদফতর থেকে সোমবার (১৫ জুলাই) পর্যন্ত ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৪২ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বানভাসিদের এসব সামগ্রী বিতরণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।তিনি আরো জানান, এছাড়া আরও ৫০ হাজার মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকায় ৩২টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।