পোড়া বর্জ্য তেল বিশ্বের একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে বর্জ্য ও পোড়া ফানেস অয়েল (তেল) মাধ্যমে নদী দূষণ এর অভিযোগে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টকে ২০ লাখ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বুধবার (১৭ জুলাই) পূর্ব নির্ধারিত সময়ে নদী দূষণের বিষয়ে শুনানি শেষে পরিবশে অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (চট্টগ্রাম মহানগর) মো. আজাদুর রহমান মল্লিক এ নির্দেশ দেন।

এছাড়া তিনি উক্ত প্ল্যান্টটিতে তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ এবং অয়েল সেপারেটর কার্যকর না করা পর্যন্ত প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখারও নির্দেশও দেন বলে জানা গেছে। এ সময় পাওয়ার প্ল্যান্টের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন আহমদ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. এরফানুল কিবরিয়া শুনানিতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন পরিবশে অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. মুক্তাদির হাসান ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান জানান, গত এক সপ্তাহ আগে চলতি মাসের ৯ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোররাতে ভারি বর্ষণের সুযোগ নিয়ে হাটহাজারী উপজেলার ১১ মাইল এলাকায় অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে পাশের মরা ছড়ায় (খাল) বর্জ্য ও পোড়া তেল ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে বর্জ্য ও তেল ফেলার অভিযোগ পেয়ে ওইদিন সকালে ঘটনাস্থল তথা মরা ছড়া (খাল) পরিদর্শন করেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন। তিনি বর্জ্য ও পোড়া তেল মরা ছড়া দিয়ে হালদা নদীতে নিঃসরণ তথা নদী দূষণের প্রামাণ পেয়ে বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরকে অবহিত করে।

তিনি আরও জানান, ওইদিনই অধিদফতরের ৩ সদস্যের একটি পরিদর্শক টিমের কাছে একি রকমের প্রমাণ মিলে। তাইতো চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (চট্টগ্রাম মহানগর) আজাদুর রহমান মল্লিক কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষকে ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে নোটিশ প্রদান করে। আর ওই নোটিশের সূত্র ধরে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে আজ বুধবার নদী দূষণ ও ইটিপি কার্যকর না থাকায় হাটহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টকে শুনানি শেষে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৭ ধারার আলোকে ২০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ইটিপি নির্মাণ এবং অয়েল সেপারেটর কার্যকর না করা পর্যন্ত পাওয়ার প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টটি উদ্বোধনের পর ওই বছরই দুই দফা প্ল্যান্টি পরিবেশ দূষণের অভিযোগে নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। ওইসময় দূষণের অভিযোগে প্ল্যান্টটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইটিপি নির্মাণের শর্তে জরিমানা মওকুফ করা হয়। ২০১৮ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে ইটিপির নকশার অনুমোদন নেওয়া হলেও তা এখনও নির্মাণ করা হয়নি। ইটিপি এবং অয়েল সেপারেটর না থাকায় পাওয়ার প্ল্যান্টটির বর্জ্য মরা খালের মাধ্যমে হালদা নদীতে মিশে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীর বিভিন্ন প্রজাতির জী বৈচিত্রকে হুমকির মুখে পতিত ফেলছে।