গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জন্য রাজস্ব ও উন্নয়নসহ ৬ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৮০২ কোটি ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা (সংশোধিত)। বাজেটে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জন্য উদ্বৃত্ত রাখা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ৮৩লাখ ৪০ হাজার টাকা। সোমবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জেলা শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠাণে এ বাজেট ঘোষণা দেন।

বাজেট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের (নং ১৩) সাংসদ শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, গাজীপুর জেলা জজ ড. মো. আবুল কাশেম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রাহাতুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

নতুন এ বাজেটে সর্বমোট ব্যায় ধরা হয়েছে ৪৭৬২ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এ বাজেটে উদ্বৃত্ত থাকবে ১হাজার ৩৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পে সর্বোচ্চ এবং শিক্ষা ও সংষ্কৃতি সংক্রান্ত খাতে সর্বনিন্ম ব্যায় ধরা হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব সাধারণ তহবিল থেকে পানি সরবরাহ, সরকারী উন্নয়ন, ও বৈদেশিক সহায়তাপুষ্টসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকে আয় দেখানো হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব (সাধারন তহবিল) খাতে ৪৪২ কোটি ৮০লাখ টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ১৮ কোটি ৪৮লাখ টাকা, উন্নয়ন (সরকারি থোক বরাদ্দ) খাতে ১০৪ কোটি ৬৯লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট ও ডিপিপি প্রকল্পের খাতে ৪হাজার ৩৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ওই বাজেটে রাজস্ব (সাধারন তহবিল) খাতে ১৬৩ কোটি এক লাখ টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ১৮ কোটি ২৫লাখ টাকা, সরকারি অনুদান খাতে ১০৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন (নিজস্ব রাজস্ব তহবিল) খাতে ২৬১ কোটি ৭৮লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট ও ডিপিপি ভিত্তিক প্রকল্পের খাতে ৪ হাজার ২১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় এর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট ঘোষনাকালে মেয়র বলেন, ব্যয়ের খাতসমূহের মধ্যে সাধারণ সংস্থাপন ব্যয় ১৬৯ কোটি ৫লাখ টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ১৮ কোটি ২৫লাখ টাকা, সরকারি অনুদানে (থোক বরাদ্দ) অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ৮০লাখ টাকা এবং অবকাঠামো ও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ৩৫লাখ টাকা। রাজস্ব তহবিলের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্তকরণ, ড্রেন নির্মানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য উন্নয়ন খাত হতে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা ও ডিপিপি প্রকল্পসমূহের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২১৫ কোটি ১ লাখ টাকা। মোট বাজেটের ৮৪শতাংশ টাকা শুধু রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা মেরামত, ড্রেন নির্মাণ, ড্রেন মেরামত খাতে ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জন্য বাজেটে উদ্বৃত্ত রাখা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ৮৩লাখ টাকা।

বাজেটে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা ৩২৯.৪০লাখ টাকা, কর্মচারী/কর্মকর্তাদের বেতনভাতা ১৭০০লাখ টাকা রাখা হয়েছে। তবে মেয়রের কোন বাড়ি ভাড়া না থাকলেও কাউন্সিলরদের অফিসভাড়া বাবদ রাখা হয়েছে ৭২.৯৬লাখ টাকা। বাজেটে মশক নিধনে ৭৫লাখ টাকা, কুকুর নিধনে ১০লাখ টাকা রাখা হয়েছে। বাজেটে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পে সর্বোচ্চ এবং শিক্ষা ও সংষ্কৃতি সংক্রান্ত খাতে সর্বনি¤œ ব্যায় ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যা বলেছেন তা তাকে প্রমাণ করতে হবে। তিনি যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন তা সবারই জানা। তার কথায় হিন্দু সমাজও বিব্রত। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আগে দেশে ফিরে আসুক তারপর দেখেন কী হয়।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশে আয়তনের দিক দিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সর্ব বৃহৎ। গাজীপুরকে সবার জন্য বসবাসযোগ্য একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে এবারের বাজেটটি সবচেয়ে বড়। এ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সড়ক বা রাস্তায় কোন দোকানপাট বসতে দেয়া হবে না। হকারদের জন্য ১০টি হকার মার্কেট নির্মাণ করে দেয়া হবে। যেখানে হকাররা কোন জামানত ছাড়াই ব্যবসা করতে পারবেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যারা রাস্তা বা ড্রেনের জন্য জমি দেবে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ফ্রি করে দেয়া হবে। ভবিস্যত প্রজন্মের জন্য তাদের নামও লিখে বা সংরক্ষণ করে রাখা হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের বেকার ব্যক্তি থাকলে তাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। নতুন অর্থ বছরে কোন ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। আমি আমার সততা থেকে এক ইঞ্চি নড়ব না। কেউ অন্যায় বা দূর্নীতি ও অনিয়ম করে পার পাবে না।