ফেনীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার আদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন উম্মে সুলতানা পপির চাচী রাবেয়া আক্তার। তিনি আদালতকে বলেন, ১৯ এপ্রিল পুলিশ ওই বাড়িতে যায়, আমি পুলিশকে দরজা খুলে দেই। এসময় পুলিশের সাথে পপিও ছিলো। পপির ঘরের রুম দুইটি। পপি যে রুমে থাকতো তাকে নিয়ে ওই রুমে যায়। ওই রুমে একটি নেভী ব্লু রংয়ের রোককা, পেস্ট কালারের ওড়না পুলিশ আমাকে দেখিয়ে বলে এগুলো কার বোরকা ও ওড়না? আমি বলি পপির বোরকা। পপি এই বোরকা পড়ে মাদ্রাসায় যেতো। পরে আমি জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি।

নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার ১৯ তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে ফজলুল করিম, রাবেয়া আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন, জাফর ইকবালের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

ফেনী জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, ৬ এপ্রিল ঘটনার দিন অথ্যাৎ সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নুসরাত কিলিং মিশনে পপির ব্যবহৃত বোরখা ও ওড়না পুলিশ জব্দ করেছিলো তা সাক্ষীরা আজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন। পুলিশ ওই বোরখা ও ওড়না পপির বাড়ি থেকে জব্দ করার বিষয় পপির চাচী রাবেয়া আক্তার আদালতে সাক্ষ্য দেন।

আগামীকাল ৬ জন সাক্ষ্য দিবেন। তারা হচ্ছেন- প্রফেসর মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, হাফেজ মোবারক হোসেন, মো. ইব্রাহীম, রেজা মো.এনামুল হক, মো. নুর উদ্দিন, আকরাম হোসেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৪১ জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২৭ জুন থেকে এ মামলার সাক্ষি কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর পর থেকে প্রতি কর্মদিবসে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। পরে রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠি নাসরিন সুলতানা, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন, দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, জহিরুল ইসলাম, হল পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, নুসরাতের মা শিরিন আখতার, শিক্ষক আবুল খায়ের, মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন, সোনাগাজী মাদ্রাসার দপ্তরী মো. ইউসুফ, সোনাগাজী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসাইন, সোনাগাজী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিন, এ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুল করিম, সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব মাওলানা নুরুল আফসার ফারুকী, সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী তানজিনা বেগম সাথী, মাদ্রাসা ছাত্রী বিবি জাহেদা বেগম তামান্না, মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক খুজিস্তা খানম, আয়া বেবী রাণী দাস, সহপাঠী আকলিমা আক্তার, কায়সার মাহমুদ, মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহমিদা আক্তার হামদুনা, নাসরিন সুলতানা, হল পরিদর্শক কবির আহম্মদ, তাহমিনা আক্তার, বিবি হাজেরা, আবু বকর সিদ্দিক ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন, ফজলুল করিম, রাবেয়া আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন, জাফর ইকবালের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।