আর মাত্র দুদিন পর ঈদুল আজহা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাধ্য অনুযায়ী মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। ইতোমধ্যে পশুতে পরিপূর্ণ রাজধানীর গরুর হাটগুলো। তারপরেও এখনো ট্রাকে ট্রাকে পশু আসছে হাটগুলোতে।

রাজধানীর গরুর হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ায় অনেকটাই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে হাটগুলো, অনেক হাটে রয়েছে উট, দুম্বাও। পর্যাপ্ত সরবরাহ হওয়ায় এবার কোরবানির পশুর দাম সহনীয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।তবে এখনো গরু বোঝাই ট্রাক হাটে আসছে। বিক্রেতারা বলছেন, আরও অনেক ট্রাক গরু পথে আছে। কালও গরুর ট্রাক আসবে।

কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র দুই দিন। এ উপলক্ষে সপ্তাহখানেক ধরেই হাটে এসেছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের পশু। এ কয়দিন কাজের ব্যস্ততা আর বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতার আনাগোনা কিছুটা কম ছিল। তবে, শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে ক্রেতা আসা বেড়েছে। ছোট আকারের, বিশেষ করে ৬৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা দামের গরু বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে, বড় গরুর বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি।শুক্রবার (৯ আগস্ট) গাবতলী পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন জামাল উদ্দিন ব্যাপারী। এক দিন আগে ২৪টি ছোট গরু হাটে তুলেছেন। এর মধ্যে চারটা বিক্রি হয়ে গেছে।জামাল উদ্দিন বলেন, শুক্রবার (৯ আগস্ট) থেকে হাটের অবস্থা ভালো। বেচাকেনা বেড়েছে।কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে ১৫টি গরু এনেছিলেন আমিরুল ইসলাম ব্যাপারী। এর মধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন।

আমিরুবলেন, ছোট গরুর বেচাকেনা ভালো। আল্লাহ দিলে খদ্দের বাজারে লাগছে।টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের খামারি শহিদুল ইসলাম। মাত্র দুই দিন আগে হাটে তুলেছেন ১০৬টি গরু। এর মধ্যে ৩০টি বিক্রি হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম বলেন, বেচাকেনা হালকা শুরু হয়েছে। আশা করছি, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনাও বাড়বে।তবে, বড় গরুর ব্যাপারীরা এখনো খুব একটা বিক্রি করতে পারেননি। বগুড়ার সান্তাহার থেকে গাবতলী হাটে এসছেন লিটন ব্যাপারী। দুই দিন আগে হাটে ২১টি বড় গরু তুলেছেন। এখন পর্যন্ত একটাও বিক্রি করতে পারেননি।

লিটন ব্যাপারী বলেন, এখনো বউনি করতে পারিনি। আশা করি, বড় গরুর ক্রেতারাও শিগগিরই হাটে আসা শুরু করবে। বরিশাল থেকে ২১টি গরু নিয়ে আসা জালাল মুন্সি বলেন, আমগো আরও গরু আইবো। এইগুলা বেচতে পারলে কালকেই আরও ২০টা গরু আইবো। মনে অইতাছে আইজকাও অনেক গরুর বেচা অইব। শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে গাবতলী, যাত্রবাড়ী, কমলাপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক হাটেই ট্রাক বোঝাই গরু আসছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেক হাটে গরু রাস্তা পর্যন্ত চলে গেছে।

যাত্রাবাড়ী গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাজলা, শনির আখড়ায় গরু রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দনিয়াতেও গরু রাখা হয়েছে। এছাড়াও গোয়ালবাড়ি মোড়, রসুলপুর এলাকায়ও গরু রেখেছেন ব্যাপারীরা। এছাড়া আরও গরু আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।

গরুর ব্যবসায়ীরা জানান, এবার হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠেছে। এবার দেশে প্রচুর গরু উৎপাদন হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে মানুষ পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন, ফলে আরও গরু আসবে। ফলে এবার দামও থাকবে সহনীয়।রাজধানীর আফতাবনগর পশুর হাটে ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে গরু ও ছাগল নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। প্রচুর গরু ও ছাগল থাকলেও ক্রেতা কম।

তবে ব্যাপারীরা আশা করছেন, শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেল থেকে বেচাকেনা ভালো হবে। এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন তারা। সকাল ১১টায় আফতাবনগর পশুর হাটে দেখা যায়, আফতাবনগরের শেষ প্রান্তে রাস্তায় বসেছে কোরবানির পশুর হাট। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে গরু ও ছাগল। এ পশুর হাটে দেশি গরুর সংখ্যাই বেশি। ক্রেতাদেরও চাহিদা দেশি গরু। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিকেল থেকে হাট জমবে বলে আশা করছেন ব্যাপারীরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারি দুলাল মিয়া নিজ খামারের ১০টি গরু নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে আফতাবনগর হাটে এসেছেন। সকাল থেকে তিনি কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। তবে বিকেলে বিক্রি ভালো হবে বলে মনে করছেন তিনি। দুলাল জানান, তিনি তার প্রতিটি গরু দুই লাখ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাচ্ছেন।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা থেকে আব্দুল মজিদ তার খামারের মাঝারি সাইজের কয়েকটি গরু নিয়ে আফতাবনগর পশুর হাটে এসেছেন। তার প্রতিটি গরু ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত তিনি দাম হাঁকাচ্ছেন।কুষ্টিয়ার ব্যাপারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবতাফ হাটে ১৯টি গরু নিয়ে এসেছি। এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। তকে বেচাকেনা জমবে বলে আশা করছি।