সকাল পাঁচটা ত্রিশ মিনিটে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছি কিন্তু ঘুম তার আগেই ভেঙ্গে গেছে। উঠেই রেডি হয়ে গেলাম আরলান্ডা বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে।Eurowings এ করে Hamburg এর পথে আমি আর মারিয়া (আমার স্ত্রী)। জার্মান প্লেন বেশ জায়গা নিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকায় স্বল্প সময়ে অল্প ঝামেলার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম হ্যামবুর্গে।

দুপুরের লাঞ্চ এয়ারপোর্টেই সেরে নিলাম আমরা। জার্মান জাতির ডিসিপ্লিন এবং এদের সর্বাঙ্গীন পরিকাঠামো আমাকে আগাগোড়াই মুগ্ধ করে আসছে। ট্রানজিটে বসে অনেক কিছু স্মৃতিচারণ করলাম এবং এর সাথে কিছু কথা ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়েও দিয়েছি।  বর্তমানে গোটা বিশ্বই কম বেশি ঝামেলার মধ্যে রয়েছে। শেয়ার মার্কেটের অবস্থা ভালো না, চীন এবং আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানদের অসচেতনতার কারনে।কাশ্মীরের অস্থিতিশীল পরিবেশের উপর বাংলাদেশের অনেকেরই কমেন্টস চোখে পড়ছে, বিশ্ব দেখছে, বহু দিনের সমস্যা কিন্তু সমাধান নেই। বর্তমান বেশির ভাগ সমস্যাই মানুষের সৃষ্টি এবং তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক ইসু।
নানা ঝামেলার মাঝে মনে পড়ে গেল আমাদের দেশের মরহুম আব্দুল জব্বারের গানের কিছু কথা, “তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়, দুখের দহনে করুণ রদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়”! কাশ্মীরের সমস্যা সবার চোখে পড়ছে, বিশ্বের অনেক দেশই উস্কানি দিচ্ছে যাতে করে একটা কেওয়াস সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশেও কিন্তু বেশ ঝামেলা চলছে, যা হয়ত বাহির থেকে তেমনটি কাশ্মীরের মত চোখে পড়েছে না, তবে তিলে তিলে আমরা অন্ধকারের দিকে যেতে শুরু করেছি।

অনেকেই হয়ত বলবে সে আবার কী? হ্যাঁ এটুকু লক্ষ্য করলেই বিষয় গুলো পরিষ্কার নজরে পড়বে যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, ডেঙ্গু সমস্যা, দূর্নীতি, অনীতি, শিক্ষার অধঃপতন, গুম, দিনে দুপুরে মানুষ খুন, খাদ্যে ভেজাল সমস্যা, সমস্যা আর সমস্যা। এত সব সমস্যার মাঝেও অনেকে দেশে বসবাস করছে রাজকীয় পরিবেশে। এ ধরনের রাজকীয় পরিবেশ জানিনে বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা। যেমন প্রতিটি সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তার বাসভবন এবং তাদের নানা ধরনের ভিআইপি সুযোগ সুবিধা যা গণতন্ত্রের পরিকাঠামোর অপজিট দিকে চলেছে। ভাবতেও গা শিওরে উঠে কি করে সম্ভব এত বিরাট আকারে পার্থক্য সৃষ্টি করা মানুষে মানুষে? Heathrow airportএ দুই দিন আগে দেখা গেছে বাংলাদেশের দুজন মন্ত্রীকে। ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দাড় করিয়ে রেখে কয়েক জন প্রতিবন্ধীদেরকে আগে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয় এবং পরে মন্ত্রী মহোদয়গনদের। এমন একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখার পরও কি মন্ত্রীদের চোঁখ খুলেছে সেদিন? এই সাথে আরেকটি ঘটনা তুলে ধরি। মাননীয় রাষ্ট্রপতি সেদিন স্মৃতিচারন করলেন পুরনো দিনের। তিনি বললেন সদ্য নিযুক্ত সংসদ সদস্য হয়েছেন অথচ তখন তাঁর কপালে গাড়ি জোটেনি। তাই রিক্সায় করে সংসদে ঢুকতে বাঁধা পেয়েছিলেন। রিক্সাওয়ালা ঢুকতে পারবেনা, উনি তখন তর্ক করেছিলেন গাড়ির ড্রাইভার ঢুকতে পারে তো রিক্সাওয়ালা পারবে না কেন? আমলারা তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংসদ সদস্যদের যাতে করে রিক্সায় আসা যাওয়া না করতে হয়। তাই তারা আজ পাজেরো গাড়িতে চলাচল করেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতির গল্পে মর্মাহত হয়েছি এই ভেবে তখন না হয় ক্ষমতার অভাবে পারেননি পরিবর্তন আনতে কিন্তু গল্প যখন বলছেন তখন তিনি দেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি। বলতে চাচ্ছি এটাই, তা হলো জনগনের প্রতিনিধি হয়ে যদি কেও ভালো কাজ করতে চায় তখন তাকে প্রথমই সেখান থেকে সরিয়ে বিলাসিতায় ডুবিয়ে দিয়ে ভুলিয়ে দেয়া হয় গরীব দুঃখির কথা। তারপর চলে শুধু শাসন, শোষন আর ভাষন। শাসন, শোষন আর ভাষন নয়, সময় এখন এই জগত থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে বের করা। যুদ্ধ কিংবা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কথা বলে পৃথিবীর পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি, হবেও না। আমি মনে করি নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে, তার জন্য দরকার সচেতনতার। সচেতনতা তৈরি করতে ঘরের বাহির হতে হবে। প্রকৃতিকে চিনতে হবে, জানতে হবে। ভালো মন্দের পার্থক্যের যাচাই বাছাই করা শিখতে হবে, তবেই হবে সম্ভব পরিবর্তনের।

লেখার শেষে শুধু এতটুকু বলব, সমস্ত উচ্চ পদস্থ কর্মচারীদের চোখের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেও পরিবর্তন হবে না। কারণ যে সুযোগ সুবিধায় তারা আছে তার থেকে তারা নিজেরা স্ব-ইচ্ছায় সরবে না। তারা কখনও বুঝতে চেষ্টা করবে না যে তারা গনতন্ত্রের চাকর। তাদেরকে সেটা মনে রেখে দেশের সেবা করতে হবে।
আমার জার্নী প্রায় শেষের পথে। প্লেন এখনই ল্যান্ড করবে জুরিখে। নতুন জার্নী শুরু করতে সুইজারল্যান্ডের মধ্যদিয়ে ট্রেনে জার্মানীতে ঢুকব। আবার আসব ফিরে নতুন কিছু নিয়ে।

রহমান মৃধা, দুরপরবাস জার্মান থেকে।