কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানির সুযোগ দিয়ে দেশের ট্যানারি শিল্পকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রিজভী বলেন, কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে যখন দেশের মানুষ ক্ষোভে দুঃখে মাটিতে পৃঁতে ফেলল ঠিক তখনই পানির দরে কেনা কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণা দিল সরকার। ঈদ উপলক্ষে অফিস, আদালত সব বন্ধ। এই সময়ে হঠাৎ গতকাল রাতের অন্ধকারে কাঁচা চামড়া রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো সরকার। গরিব, মিসকিন ও এতিমদের হক মারার পর কার স্বার্থ উদ্ধারে, কেন এই তড়িঘড়ি করে এই রফতানির ঘোষণা দেয়া হলো তা দেশের মানুষ জানতে চায়।

তিনি বলেন, একদিকে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কম টাকায় চামড়া কিনে এতিম মিসকিনদের পেটে লাথি মারা হলো। এখন আবার কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানির সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হলো। সবই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত এবং সিন্ডিকেটের লুটপাটের জন্য মহাকারসাজি। এই চামড়াই আবার দেখা যাবে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা হবে চড়া মূল্যে। কাঁচা চামড়া রফতানি হলে শতভাগ দেশীয় শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এবং এই শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

চামড়া রফতানিতে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, চামড়াশিল্প ধ্বংস করে পানির দরে কেনা কাঁচা চামড়া প্রতিবেশী দেশে রফতানি করতে হচ্ছে। ঠকছে কৃষক, ঠকছে এতিম-গরিব-মিসকিন। জিতছে লুটেরা, জিতছে সিন্ডিকেট আর তাদের সতীর্থরা। ক্ষতি হবে এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত অনেক লোকের। বেকার হয়ে পড়বে বিপুল সংখ্যক মানুষ।

একই সংবাদ সম্মেলনে চামড়া বিশেষজ্ঞ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব একটি হিসেব তুলে ধরে বলেন, কাঁচা চামড়া ফিনিশড করা পর্যন্ত মোট খরচ হয় ৯৯০ টাকা। আর ওই ফিনিশড করা চামড়া রফতানি হয় ৪১১৭ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে নিট লাভ হত ৩১২৮ টাকা প্রতিটি চামড়ায়। আর একটি চামড়া দিয়ে ৯ জোড়া জুতা তৈরি করা যায়। ৯ জোড়া জুতা তৈরিতে খরচ হয় ৪৭৭৫ টাকা। আর এই জুতা রফতানি করা হয় ২৭ হাজার টাকায়। অর্থাৎ একটি চামড়া থেকে ২২ হাজার ২২৫ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা লাভ হয়। তাই জুতা না বানিয়ে যদি কাঁচা চামড়া রফতানি করা হয় তাহলে এই কোরবানি ঈদে ৪৪ হাজার ৪৫০ কোটির ক্ষতি হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ।