ঘুষ গ্রহণকারীর পাশাপাশি ঘুষ দাতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে ঘুষ নেবে তার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতে হবেই, আর যে দেবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ দুইজনই অপরাধী। এই বিষয়টা মাথায় রেখে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

রোববার (১৮ আগস্ট)সকালে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহা পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সচিবসহ তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে কত আয় করলো, কে কত খরচ করলো তারও একটা হিসাব থাকা উচিত। বিশেষ করে, বড় ধরনের খরচের। কে কোন খাতে, কোন উদ্দেশ্যে খরচ করছে, তার সেই আয়ের উৎস কী, এর হিসাব রাখা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, চাওয়া-পাওয়ার সীমা আছে। সম্পদের সীমা আছে। মানুষ আসলে অন্ধ হয়ে যায় অর্থের জন্য। কিন্তু এটা ভুলে যায় যে মরে গেলে কিছুই সঙ্গে নেওয়া যাবে না, কবরে একাই যেতে হবে। যা রেখে যাবে সেটা আর কোনওদিন তার কাজে লাগবে না। আর যদি বেশি রেখে যায় তবে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ওই নিয়ে মারামারি কাটাকাটি শুরু হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের পেছনে অন্ধের মতো ছুটে বেড়ানো আর নিজের সবকিছু নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। মানুষের আয় বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অর্থনৈতিক লেনদেন বেড়েছে। সেজন্যই এ বিষয়টা মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। যে ঘুষ দেবে সেও যেমন দোষী, যে নেবে সেও দোষী।এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যথেষ্ট সক্রিয় আছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবাইকে সচেতন ও সর্তক হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডেঙ্গু, এটা বিরাট সমস্যা। এটা শুধু আমাদের দেশে না, আমাদের আশপাশে অনেক দেশে কিন্তু ডেঙ্গুটা দেখা গেছে। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে। কোনো কোনো দেশে মহামারি আকারে, যেমন ফিলিপাইনে মহামারি আকারে দেখা গেছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে তারা বাধ্য হয়েছে।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতন হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা, মশার লার্ভাটা যেন না জন্মে, মশা যেন জন্ম না নিতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং নিজে সচেতন থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত করা। সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সে বিষয়ে আমাদের আরও সর্তক হতে হবে।

তিনি বলেন, এখনও এর প্রকোপ অনেকটা আছে। এখন দেখা যাচ্ছে অনেক জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সে ব্যাপারে আমাদের সর্তক হতে হবে। আমি মনে করে এটা মোকাবিলা করায় যথেষ্ট সচেতন ছিলেন, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অফিসের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সবাই অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে যে যেখানে ছিল প্রত্যেকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ ভৌগলিক দিক থেকে ছোট কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড়। এজন্য আমাদের কাজের চাপটা অনেক বেশি।বন্যা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বন্যা আমাদের দেশে আসবে, এর প্রয়োজনও আমাদের আছে। আমাদের দেখতে হবে দেশের মানুষের যেন জানমালের কম ক্ষতি হয়। আমরা কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বন্যা নিয়ে তিনি বলেন, বন্যা থেকে ভালোটা আমাদের নিতে হবে, ক্ষতিটা বন্ধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম,ড.মশিউর রহমান ও ড.তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।