প্রথমবারের মতো হালদায় অবমুক্ত করা হচ্ছে এক লাখ মাছ। ‘মা মাছের’ মজুদ বাড়াতেই মাছগুলো ছাড়া হচ্ছে। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন।‘দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর কার্প জাতীয় মা মাছের মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এটা করা হচ্ছে।

হালদা নদীতে অতীতে স্থানীয় হ্যাচারি থেকে ক্রয় করে কার্প জাতীয় মাছ অবমুক্ত হতো। এসব মাছ থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেত না। তবে এবারই প্রথমবারের মতো হালদা নদীর রেণু প্রক্রিয়াজাত করে হালদায় ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ মে রাতে হালদায় ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। ২৫ মে রাত থেকে ২৬ মে সকাল পর্যন্ত নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেন হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। এবার রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মিলে প্রায় ১০ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়। এরপর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার সরকারি হ্যাচারি ও ডিম সংগ্রহকারীদের নিজস্ব মাটির কুয়ায় নেয়া হয় এসব ডিম। এরপর রেণু বের করা হয় ওইসব ডিম থেকে।

হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গেল মৌসুমে হালদা নদীর এক কেজি রেণু ক্রয় করা হয়। প্রতি কেজি রেণু থেকে প্রায় দুই লাখ পোনা হয়। তবে এরমধ্যে ৬০ শতাংশ রেণু থেকে পোনা হয়। এ হিসাবে বর্তমানে এক কেজি রেণু থেকে এক লাখ মাছ তৈরি হয়। শীঘ্রই এসব পোনা হালদায় অবমুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে মুহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, উল্লেখিত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় গত ৩০ এপ্রিল থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। এরমধ্যে যে কোনদিন মাছ অবমুক্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হালদা নদীর পোনা অনেক মানসম্পন্ন। কিন্তু হালদার পোনা দেশের অন্যত্র নিয়ে প্রক্রিয়া করে বাজারজাত করা হলেও এ নদীতে ফেলার কোনো উদ্যোগ ছিল না। এবার প্রথমবারের মতো হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মা মাছের মজুদ বৃদ্ধির প্রকল্প গ্রহণ করা হলো। গত ২৫ মে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর স্থানীয়রা সেই ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারি কিংবা মাটির তৈরি কুয়ায় স্থানীয় পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদন করে। উৎপাদিত এককেজি রেণু গত জুন মাসে ক্রয় করে গড়দুয়ারা ইউনিয়নের একটি পুকুরে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রতিটি মাছের আকার ৬ ইঞ্চি বা তার বেশি হলে হালদা নদীতে অবমুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রকল্প ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিচর্যায় থাকা এক লাখ মাছ খুব শীঘ্রই হালদা নদীতে অবমু্‌ক্ত করা হবে। হালদা নদীর পোনা যথেষ্ট মানসম্পন্ন। তাই এসব পোনা হালদাতে অবমুক্ত করে মা মাছের মজুদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হালদা নদীতে উন্নতমানের মা মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ডিমের পরিমাণও বাড়বে। যা দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতেও বড় অবদান রাখবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, অসাধারণ উদ্যোগ। এ উদ্যোগের ফলে দেশের লাভ হবে। অতীতে স্থানীয় হ্যাচারি থেকে পোনা নিয়ে ছাড়া হলেও হালদার পোনা হালদাতে ছাড়ার উদ্যোগ এবারই প্রথম।