দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে সত্যের অপলাপ বলেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বছরের সেরা মিথ্যাচার। বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে গেলে শেখ হাসিনা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী তার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন টেলিভিশন আমি দিতেও পারি, নিতেও পারি। অর্থাৎ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। সৃতরাং গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তার কর্মের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত। তার বক্তব্য সত্যের অপলাপ।

তিনি বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে আওয়ামী রসগোল্লা গেলাতে বাধ্য করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে টিভি চ্যানেলগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে টেলিভিশন মালিক ও সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের করার কিছুই থাকে না।তাদেরকে বাধ্য হয়ে সরকারি ট্যাবলেট গিলতে হয়। সত্য প্রচার করতে গেলে তাদের পরিণতি হবে আমার দেশ পত্রিকা কিংবা দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চ্যানেলের মতো।

যদি কেউ সত্য ও স্বাধীন মতামত গণমাধ্যমে প্রকাশ করে তাহলে তার ওপর নেমে আসবে অকথ্য জুলুমের ধারালো তরবারি। যেমন নেমে এসেছেআমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কিংবা বর্ষিয়ান লেখক-কলামনিস্ট শফিক রেহমানের ওপর। বর্তমানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে বলেই গণতন্ত্র ছিন্নমূলে পরিণতহয়েছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও সরকার লুকোচুরি করছে বলে অভিযোগ করে রিজভী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেথ রিভিউ প্রক্রিয়া শেষে বুধবার পর্যন্ত ৫২ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৮৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে ।

রিজভী বলেন, সরকার এখনও ডেঙ্গুতে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানতে দিচ্ছে না মানুষকে। এ নিয়ে লুকোচুরি খেলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা ৫২। আর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ১৭৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে।

সরকারের মন্ত্রীরা এখনও এ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ডেঙ্গুকে মহামারি অবস্থায় রেখে সিঙ্গাপুর গিয়ে বসে আছেন, উত্তরের মেয়র ব্যস্ত ফটোসেশনে। বিনা ভোটে গদি দখল করা এসব মন্ত্রী- মেয়রদের জনগণের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই।এইডিস মশা নিধনে সরকারের পদক্ষেপ হতাশাজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, প্রতিদিনই গড়ে তিনজন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটছে। একদিকে মানুষ প্রতিদিনই মরছে আর অন্যদিকে এলজিআরডি মন্ত্রী নাকি সংবর্ধনা নিয়েছেন ডেঙ্গু দমনে সফলতার জন্য।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের ঘটনার সাথে জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ইতিহাস বিকৃতি বলেন রিজভী।ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে ১৫ অগাস্টের মর্মস্পর্শী ঘটনার পর আওয়ামী লীগেরই লোকজন সরকার গঠন করল কিভাবে? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি ১৫ অগাস্টের বিষয়ে এইচটি ইমামকে জিজ্ঞেস করুন তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, যারা সেদিন লাশ ডিঙিয়ে মোশতাক সরকারের স্পিকার থেকে থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এদের অনেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তারা এমপি হলেন কিভাবে? তৎকালীন সেনাপ্রধানের কোনো দায় নেই, অথচ মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম কেন টেনে নিয়ে আসেন সেটি আমরা জানি। সেটি হলো- জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা, যা নানা কুৎসা রটানোর পর আজও বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি, হবেও না।

ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শেখ আব্দুল হালিম খোকন ও সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সুকোমল বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।