ভারতের আসামে সম্প্রতি ঘোষিত জাতীয় চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রসঙ্গে বাদ পড়া নাগরিকদের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয়ে মন্তব্য করছি না এবং করতে চাই না। তারা যদি আমাদের সঙ্গে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়াটা আমরা জানাবো। আমরা সুস্পষ্ট ভাবে বলতে চাই একাত্তর সালের পরে আমাদের বাংলাদেশ থেকে কোন লোক ভারতে যায়নি। যারা গিয়েছে তারা আগেই গিয়েছে। ওই দেশ থেকে লোক যেমন এ দেশে এসেছেন, তেমনই আমাদের দেশ থেকেও গিয়েছেন। তাই এ নিয়ে আমাদের চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

রবিবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে অনুষ্ঠিত ৫৬তম কারারক্ষীদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে কারারক্ষীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে সরকারের সাফল্যকে আরো উজ্জল করবেন। কারাভ্যন্তর হতে জঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে কোনরুপ সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে বিষয়ে সর্তক থাকবেন। শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে প্রধান্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, কারাগার ক্রিমিনাল জাস্টিজ সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যুগে সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্যে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারারক্ষীদের ৫৬তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সগুলো সময়োপযোগী সিলেবাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতির বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আধুনিক অস্ত্র ও নিরাপত্তা যন্ত্র পরিচালনা, অস্ত্রবিহীন প্রতিরক্ষা কৌশল, তথ্য প্রযুক্তি, কম্পিউটার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জাতির পিতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, অপরাধ তত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা হয়েছে। কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের শরীরিক উৎকর্স ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে।

মন্ত্রী বলেন, কারাগারে বন্দি গরীব অসহায়দের জন্য কারাগার কর্তৃক লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস এ্যাক্ট-২০০০ কার্যকরী করে বিনা খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এনজিওদের মাধ্যমে কারাগারে প্যারালিগ্যাল এডভাইজরী সার্ভিস চালুকরে আইনী সহায়তা দেয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে প্রিজন লিংক ‘স্বজন’ নামে টেলিফোন বুথ স্থাপন করে সুনির্দিষ্ট বন্দি ব্যাতিত কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যান্য কারাগারগুলোতেও তা বাস্তবায়ন করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্দিদের শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের আয়ের অর্ধেক বন্দিকে প্রদান করার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষন একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে অল্প কিছু দিনের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

সকালে মন্ত্রী কাশিমপুর কারা চত্বরের প্যারেড মাঠে পৌছলে কারা কর্মকর্তাগণ তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে মন্ত্রী খোলা জীপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শণ করেন। অনুষ্ঠাণে তিনি নবীন কারারক্ষীদের কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন ও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) মো. শহিদুজ্জামান, কারা মহাপদির্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ বজলুর রশীদ, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোঃ আবরার হোসেন, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ বজলুর রশীদ, কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ আলতাব হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ শাহজাহান আহমেদ, গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার নেছার আহমেদসহ অন্যান্য কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের সচিব (সুরক্ষা সেবা) মোঃ শহিদুজ্জামান বলেন, বন্দিদের আত্মীয় স্বজন ও সাধারণ জনগণকে সেবা প্রদানের নিমিত্তে ফেসবুকে “বাংলাদেশ প্রিজন্স” নামে একটি অফিসিয়াল পেজ খোলা হয়েছে। কারাগারে বন্দিদের পূর্বে নাস্তায় রুটি গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে ২ দিন খিচুরী, ১দিন হালুয়া রুটি ও ৪ দিন সবজি রুটি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্দি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পূর্বে মাসিক ২০টাকা সম্মনীর স্থলে বর্তমানে ৫০০টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। রমজান মাসে ইফতারির জন্যে ১৫টাকার স্থলে ৩০টাকা এবং যে কোন উৎসবে উন্নত মানের খাবারের জন্যে পূর্বের ৩০টাকার স্থলে ১৫০টাকা করা হয়েছে।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা-১ এর সিনিয়র জেলা সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, প্রশিক্ষনটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হয়। এতে ৩১৯জন নবীন কারারক্ষী অংশ নেন। সেখানে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে পরবর্তী তিন মাস গাজীপুরের কাশিমপুর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। প্রশিক্ষণে নবীন কারারক্ষীদের মধ্যে সর্ব বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারকারী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মোঃ মারুফ হোসেন, দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের মোঃ বিপ্লব হোসেন এবং বেস্ট ফায়ারার নির্বাচিত মেহেরপুর জেলা কারাগারের মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। পরে তিনি কারারক্ষীদের মনোজ্ঞ শারীরিক কসরত পরিদর্শণ করেন।