কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পসহ বিশাল বস্তি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। কোনো নীয়মনীতির বালাই না থাকায় দিন দিন এসব রোহিঙ্গারা দিশেহারা। স্থানীয়দের এনআইডি কার্ড এবং আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা কিনছে বাংলাদেশি বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল সিম। এসব সিম বিক্রি করছে মোবাইল অপারেটরদের এজেন্ট ও ডিলাররা। সম্প্রতি পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে এক সপ্তাহের মধ্যে সিম বিক্রি বন্ধ না করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, বলেছেন জেলা প্রশাসক। অন্যদিকে রোহিঙ্গা বেপরোয়া হয়ে ওঠার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সিম বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা করেছিল সরকার। অথচ ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গারা অবাধে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আসছে। মূলত স্থানীয়দের এনআইডি কার্ড এবং আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটরদের এজেন্ট ও ডিলারদের মাধ্যমে হাজার হাজার সিম তুলে রোহিঙ্গারা ব্যবহার করছে। এমন তথ্য খোদ পুলিশের। পুলিশের তথ্য মতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যারা ব্যবহার করছে বাংলাদেশি বিভিন্ন অপারেটরের ৫ লাখের বেশি সিম।

এ বিষয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ক্যাম্প এলাকায় যেসব মোবাইল অপারেটরদের ডিলার রয়েছে, তারা স্থানীয়দের নামে নিবন্ধিত সিম রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছে। এতে রোহিঙ্গা খুব সহজেই হাতে পাচ্ছে বিভিন্ন অপারেটরদের সিম কার্ড। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে বাংলাদেশের নামে যে নিবন্ধিত সিম রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হোক। নতুন করে বলে দেয়া হোক যে আর কোন সিম বিক্রি করা হবে না। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।

কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, ‘ই’ ব্লকের কর নুরুল হকের পুত্র নুর মোহাম্মদ, আবুল হাসেমের ছেলে মিজান কম্পিউটার নিয়ে সিম রেজিষ্ট্রেশনের কাজ করছে। এখান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও চিত্রও আপলোড করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটদেরকে রোহিঙ্গাদের মোবাইলসেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে এইগুলো কার্যকর যেনো করা হয়। আর যদি না হয়, তাহলে সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে এইগুলোর বিরুদ্ধে যে আইনগত ব্যবস্থা আছে, আমরা তা গ্রহণ করবো।

কক্সবাজার উখিয়ার স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, শরণার্থীদের এই ধরনের সমাবেশ করার নিয়ম আমরা কোথাও কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, কিছু সরকারি কর্মকর্তারা তাদের অনুমতি দিয়েছে, আসলে এটা উদ্বেগজনক বিষয়। এ বিষয়টি আমাদের স্থানীয় জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে।

গত ২৫ আগষ্ট মিয়ানমার ছাড়ার ২ বছর পালনের জন্য উখিয়া ক্যাম্প-থ্রি’র ইনচার্জের কাছে অনুমতি চেয়েছিলো মহিবুল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস নামের সংগঠন। কিন্তু কোনো রকম লিখিত অনুমতি না থাকা সত্বেও তারা বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করে। আর এ নিয়ে শুরু হয় প্রশাসনে তোড়জোড়। এমন অবস্থায় সরকার রোববার সন্ধ্যায় প্রথম পর্যায়ে ৭টি ক্যাম্পের ইনচার্জকে বদলি করে। সর্বশেষ বদলি করা হয় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামকে।