রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে আগুনে অন্তত এক হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন ইসি কর্মকর্তারা। তবে অতিগুরুত্বপূর্ণ ওই ভবনে কীভাবে আগুন লাগলো, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনো। আগুন লাগার কারণ উদ্ঘাটন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে নির্বাচন কমিশন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, নির্বাচন কমিশন ভবনের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় আগুন লাগার নেপথ্যে কোনো নাশকতা আছে কিনা, যাচাই করা হবে তাও।

রোববার রাতে নির্বাচন কমিশন ভবনের ইসি সচিবালয়ের বেসমেন্ট-১ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রোববার আনুমানিক রাত ১০টা ৫০ মিনিটে হঠাৎ আগুন লাগে। রাত সোয়া ১২টার দিকে ওই আগুন নেভানো হয়। বেসমেন্ট-১ এ ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট, মনিটর ও ব্যালট ইউনিট অবস্থিত।

রংপুর-৩ আসনে আসন্ন উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। এর আগেই ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিটে অগ্নিকাণ্ড হলো। অবশ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এতে ওই নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। সোমবার নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দুপুরে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান জানান, আগুনে অল্প ক্ষতি হয়েছে। সেখানে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মতো ইভিএম ছিল। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ইভিএমের সংখ্যা এক হাজারের বেশি হবে না। এতে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ভোট করতেও সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, বেসমেন্ট-১ এর ভেতরে থাকা কয়েকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসি লাইন ও বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে ইভিএম, ব্যালট ইউনিট ও মনিটরগুলো। তবে পাশের কক্ষেই থাকা কন্ট্রোল ইউনিটের ক্ষতি হয়নি। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্তি সচিব বলেন, ‘ওখানে কেউ বসবাস করে না, কোনো হিটার নেই, কাজেই বিদ্যুৎ ছাড়া অন্যকিছু তো দেখছি না।’ পুরো ঘটনাতদন্তে ইসির পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

ওই সময়ে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, যে ধরনের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সে রকম কোনো ক্ষতিই হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ খুবই নগণ্য হবে। ইভিএমে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা আগুন নেভাতে গিয়ে স্প্রে করা পানিতে হয়েছে। এই পানি জমে ব্যালট ইউনিটের যাতে ক্ষতি না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নথি বা কাগজ ছিল না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচন ভবন একটি স্পর্শকাতর এলাকা। বিশেষ করে যেখানে আগুন লেগেছে, ওই এলাকাটা বেশি স্পর্শকাতর এলাকা। সেখানে কক্ষগুলো বন্ধ ছিল। কীভাবে আগুন লাগলো তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। কোনো নাশকতা ছিল কি-না, তাও যাচাই করবে ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটি।

তদন্তে পৃথক দুই কমিটি: আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও পৃথক তিন সদস্যের কমিটি করা হয়।

ইসি গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমানকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী সচিব (সেবা-২) খ ম আরিফুল ইসলামকে। এ ছাড়াও ওই কমিটিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

এই কমিটিকে আগুন লাগার কারণ ও উৎস নির্ধারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আগুন যাতে না লাগে, সে বিষয়ে সুপারিশ করে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) আবুল হোসেনকে প্রধান করে পৃথক তিন সদস্যের কমিটি করেছে ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এই কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।