গাজীপুরে জেপি নেতার মেয়ে নববধূ এক শিক্ষার্থীকে তার স্বামী খুন করেছে বলে অভিযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের তার স্বামী রবিউল ইসলামকে (২৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম শোভা রাজমনি হোসনা (২০)। সে মেহেরপুরের গাংনী থানার বিশ্বাসপাড়া এলাকার মো. আবদুল হালিমের মেয়ে। আবদুল হালিম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক। নিহতের স্বজনরা তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করলেও চিকিৎসকরা এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছেন।

নিহতের বাবা আবদুল হালিম ও স্বজনরা জানান, গাজীপুরস্থ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ভর্তির জন্য ভাড়া বাসায় থেকে কোচিং করছিল শোভা। গত প্রায় দু’মাস আগে ১২ জুলাই মাগুরার জেলা সদরের শেহেলডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলামের (২৭) সঙ্গে শোভার বিয়ে হয়। বিয়ের পর শোভা স্বামী রবিউলের সঙ্গে ডুয়েটের পাশর্^বর্তী গাজীপুর শহরের উত্তর ভুরুলিয়া এলাকার মোশারফ হোসেনের ফ্ল্যাটে সাবলেটে বসবাস করতো। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুক বাবদ ৩০ লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে এনে দেওয়ার জন্য রবিউল তার স্ত্রী শোভাকে মারধর করে আসছিল। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে শোভা ফোন করে তার মা ও বাবাকে জানায় যৌতুকের জন্য স্বামী তাকে বেদম মারধর করেছে। এসময় আব্দুল হালিম তার মেয়েকে রাতটুকু সহ্য করে সকালে বাড়ি চলে আসতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পর থেকে শোভার মোবাইল ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। বুধবার ভোর ৪টার দিকে মেয়ের বাসার মালিকের স্ত্রী ফোন করে শোভা অসুস্থ্য বলে জানিয়ে শোভার বাবা-মাকে দ্রুত গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে বলেন। দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে পান শোভার বাবা। তাঁর দাবি রবিউল যৌতুকের টাকা না পেয়ে শোভাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে গলায় দড়ি লাগিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারের চেষ্টা চালায়। নিহত শোভার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার এসআই রিয়াজ উদ্দিন জানান, স্বামী রবিউল রাত ৪টায় অচেতন অবস্থায় স্ত্রী শোভাকে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শোভার গলা ও হাতে কালচে দাগ রয়েছে। স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শোভার স্বামীকে আটক করা হয়েছে। স্বামীর দাবি শোভা ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।

এব্যাপারে সদর থানার ওসি এজাজ শফী জানান, এ ঘটনায় নিহত শোভার বাবা মো. আবদুল হালিম বাদি হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। রবিউলকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, গলায় রশির দাগ ও হাতে ব্লেডে ছোট ছোট আঘাতের চিহ্ন থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শোভা আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পরই তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।